Saturday, 15 August 2015

ROJA IN SAHI BUKHARI SHARIF

১৭৭০। কুতায়বা ইবনু সা’ইদ (রহঃ) তালহা ইবনু ‘উবাদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, এলোমেল চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা’আলা আমার উপর কত সালাত (নামায/নামাজ) ফরজ করেছেন? তিনি বলেনঃ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত (নামায/নামাজ); তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার উপর কত সিয়াম আল্লাহ তা’আলা ফরজ করেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রমযান মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম); তবে তুমি যদি কিছু নফল কর তবে তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার উপর কি পরিমান যাকাত ফরয করেছেন? রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার উপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেও সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।
১৭৭১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সিয়াম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সিয়াম ফরজ হল তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ (রহঃ) এ সিয়াম পালন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগূলোতে সাধারন সিয়াম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।
১৭৭২। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, জাহিলী যুগে কুরায়শগন ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পরে এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সিয়াম ফরজ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার ইচ্ছা ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সিয়াম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না।
১৭৭৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রানে, অবশ্যই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।
১৭৭৪। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একদিন ‘উমর (রাঃ) বললেন, ফিতনা সম্পর্কিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসটি কার মুখস্ত আছে? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশীই মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত (নামায/নামাজ), সিয়াম এবং সদকা এর কাফফারা হয়ে যায়। ‘উমর (রাঃ) বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি না, আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি ওই ফিতনা সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আন্দোলিত হতে থাকবে। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ সরজা আছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, এ দরজা কি খুলে যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, ভেঙ্গে যাবে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, তাহলে তো তা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমার মাস্রুক (রহঃ) কে বললাম, হুযায়ফা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করূন, ‘উমর (রাঃ) কি জানতেন, কে সেই দরজা? তিনি বললেন, হাঁ, তিনি এরুপ জানতেন যে রুপ কালকের দিনের পূর্বে আজকের রাত।
১৭৭৫। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।
১৭৭৬। ইবরাহীম ইবনু মুনযীর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাঁকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী, তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর দরজা থেকে ডাকা হবে। সে মিজাহিদ তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে, যে সিয়াম পালনকারী, তাঁকে রায়্যাব দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সা’দকা দাঙ্কারী তাঁকে সা’দকা দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ। আমি আশা করি তুমি তাঁদের মধ্যে হবে।
১৭৭৭। কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়।
১৭৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানকে।
১৭৭৯। ইয়াহহিয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাহ কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ন করবে। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ব্যতীত অন্যরা লায়স (রহঃ) থেকে ‘উকায়লা এবং ইউনুস (রহঃ) সূত্রে বর্ননা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে।
১৭৮০। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাপ করা হবে। আর যে ব্যাক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তাঁরও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে।
১৮৮১। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিব্রাইল আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল তাঁর একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরাঈল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।
১৭৮২। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।
১৭৮৩। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কব্জায় মুহাম্মদের প্রান, তাঁর শপথ! সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়ইমের জন্য রয়েছে দূ’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র বিনিময়ে আনন্দিত হবে।
১৭৮৪। ‘আব্দান (রহঃ) ’আলকামা (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সঙ্গে চলতে ছিলাম তখন তিনি বললেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম, তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা বিবাহ চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষন করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে। সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) তাঁর প্রবৃত্তিকে দমন করে। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, শব্দের অর্থ বিবাহ।
১৭৮৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের কথা আলোচনা করে বললেনঃ চাঁদ না দেখে তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার করবে না। যদি মেঘাছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময় (ত্রিশ দিন) পরিমান পূর্ন করবে।
১৭৮৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাস ঊনত্রিশ রাত বিশিষ্ট হয়। তাই তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) শুরু করবে না। যদি আকাশ মেঘাবৃত থাকে তাহলে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ন করবে।
১৭৮৭। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’হাতের অঙ্গুলী তুলে ইশারা করে) বলেনঃ মাস এত এত দিনে হয় এবং তৃতীয় বার বৃদ্ধাঙ্গুলীটি বন্ধ করে নিলেন।
১৭৮৮। আদম (রহঃ) ’ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা বললেন, আবূল কাসিম বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম আরম্ভ করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার করবে। আকাশ যদি মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে শ’বানের গননা ত্রিশ পুরা করবে।
১৭৮৯। আবূ ‘আসিম (রহঃ)। উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাসের জন্য তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা করলেন। ঊনত্রিশ দিন পার হওয়ার পর সকালে বা সন্ধায় তিনি তাঁদের নিকট গেলেন। তাঁকেপ্রশ্ন করা হ, আপনি তো এক মাস পর্যন্ত না আসার শপথ করেছিলেন? তিনি বলেলেন, মাস ঊনত্রিশ হয়েও থাকে।
১৭৯০। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের সঙ্গে করলেন। এ সময় তাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তখন তিনি উপরের কামরায় উনত্রিশ রাত অবস্থান করেন। এরপর অবতরন করলে ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি তো এক মাসের জন্য ঈলা করেছিলেন। তিনি বললেনঃ মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
১৭৯১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’টি মাস কম হয় না। রতা হল ঈদের দু’মাস রমযানের মাস ও যুলহজের মাস। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) বলেন, রমযান ঘাটতি হলে যুলহাজ্জ (হজ্জ) পূর্ন হবে। আর যুলহাজ্জ (হজ্জ) ঘাটতি হলে রমযান পূর্ন হবে। আবূল হাসান (রহঃ) বলেন, ইসহাক ইবনু রাহওয়াই (রহঃ) বলেন, ফযীলতের দিক থেকে এ দুই মাসে ঘাটতি নেই, মাস ঊনত্রিশ দিনে হোক বা ত্রিশ দিনে হোক।
১৭৯২। আদম (রহঃ) ইদন ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা উম্মী জাতি। আমরা লিখি না এবং হিসাবও করিনা। মাস এরুপ অর্থাৎ কখনও উনত্রিশ দিনের আবার কখনও ত্রিশ দিনের হয়ে থাকে।
১৭৯৩। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) থেকে বর্নিত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কেউ রমজানের একদিন কিংবা দুই দিন আগে থেকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ সময় সিয়াম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) করতে পারবে।
১৭৯৪। ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, মুহাম্মদ এর সাহাবীগন অবস্থা এই ছিল যে, যদি তাঁদের কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন, ইফতারের সময় হলে ইফতার না করে ঘুমিয়ে গেল। সে রাতে এবং পরের সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। কায়স ইবনু সিরমা আনসারই (রাঃ) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছিলেন। ইফতারের সময় তিনি তাঁর স্ত্রীর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট কিছু খাবার আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে আমি যাচ্ছি, দেখি আপনার জন্য কিছু তালাশ করে আনি। তিনি কাজে রত থাকতেন। তাই ঘুমে তাঁর চোখ ভিজে গেল। এরপর স্ত্রী এসে যখন তাকে দেখলেন, তখন তাঁকে বললেন, হায়, তুমি বঞ্ছিত হয়ে গেলে! পরদিন দুপুর হলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। এ ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করা হলে এ আয়াতটি নাযিল হয়ঃ সিয়ামের রাত্রে তোমাদের স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে। এ হুকুম সমন্ধে অবহিত হয়ে সাহাবীগন খুবই আনন্দিত হলেন। এরপর নাযিল হলঃ তোমরা পানাহার কর যতক্ষন রাতের কাল রেখা হতে (ভোরের) সাদা রেখা স্পষ্ট তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়।
১৭৯৫। হাজ্জ (হজ্জ) ইবনু মিনহাল (রহঃ) ‘আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হলঃ ‘’তোমরা পানাহার কর রাত্রির কাল রেখা হতে সাদা রেখা যতক্ষন স্পষ্ট রুপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়্‌ তখন আমি একটি কাল এবং একটি সাদা রশি নিলাম এবং উভয়টি কে আমার বালিশের নিচে রেখে দিলাম। রাতে আমি এগূলোকে দিকে বারবার তাকাতে থাকি। কিন্তু নিকট পার্থক্য প্রকাশিত হল না। তাই সকালেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে এ বিষয় বললাম। তিনি বললেনঃ এতো রাতের আধার এবং দিনের আলো।
১৭৯৬। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হওঁ। ; ‘’তোমরা পানাহার কর, জতক্ষন না কাল রেখা সাদা রেখা স্পষ্ট রুপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। কিন্তু তখনো কথাটি নাযিল হয় নি। তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে ইচ্ছুক লোকেরা নিজেদের দুই পায়ে একটি কাল এবং একটি সাদা সুতলি বেধে নিতেন এবং সাদা কাল এই দুইটির পার্থক্য না দেখা পর্যন্ত তাঁরা পানাহার করতে থাকতেন। এরপর আল্লাহ তা’আলা শব্দটি নাযিল করলে সকলেই বুঝতে পারলেন যে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাত (এর আধার) এবং দিন (এর আলো)।
১৭৯৭। ‘উবায়দ ইবনু ইসমাইল (রাঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে এবং কাসিম মুহাম্মদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) রাতে আযান দিতেন। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) আযান দেওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর। কেননা ফজর না হওয়া পর্যন্ত যা আযান দেয় না। কাসিম (রহঃ) বলেন, এদের উভয়ের মাঝে শুধু এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, একজন নামতেন এবং অন্যজন উঠতেন।
১৭৯৮। মুহাম্মদ ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে সাহরী খেতাম। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) শরীক হওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করতাম।
১৭৯৯। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাহরী খাই এরপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাড়ান। বর্ননাকারী বলেন, আম জিজ্ঞেসা করলাম আযান ও সাহরীর মাঝে কতটিকু ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত (পাঠ করা) পরিমান।
১৮০০। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটানা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে থাকলে লোকেরাও একটানা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে শুরু করে। এ কাজ তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাড়াল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিষেধ করলেন। তাঁরা বলল, আপনি যে এক নাগাড়ে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন? তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাদের মত নই। আমাকে খাওয়ানও হয় ও পান করানো হয়।
১৮০১। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা সাহরী খাও , কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে।
১৮০২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) সালম ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , ‘ আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে এ বলে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠালেন , যে ব্যাক্তি খেয়ে ফেলেছে সে যেন পূর্ণ করে নেয় অথবা বলেছেন , সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আদায় করে নেয় আর যে এখনো খায়নি সে যেন আর না খায়।
১৮০৩। আবদুল্লাহ ইবনু মাসআলা (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু ‘আব্দুর রাহমান থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি এবং আমার পিতা ‘আয়িশা (রাঃ) এবং উম্মে সালামা (রাঃ)নিকট গেলাম। (অপর বর্ণনায়) আবূল ইয়ামান (রহঃ) মারওয়ান (রহঃ)থেকে বর্ণিত যে, ‘আয়িশা (রাঃ) এবং উম্মে সালামা (রাঃ) তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে , নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনূবী অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন। মারওয়ান (রহঃ)‘আব্দুর রাহমান ইবনু হারিস (রহঃ) কে বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি , এ হাদীস শুনিয়ে তুমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে শঙ্কিত করে দিবে। এ সময় মারওয়ান (রহঃ)মদিনার গভর্ণর ছিলেন। আবূ বাকর (রহঃ) বলেন মারওয়ান (রাঃ) এর কথা ‘আব্দুর রাহমান (রহঃ) পছন্দ করেননি রাবী বলেন , এরপর ভাগ্যক্রমে যুল-হুলাইফাতে একত্রিত হয়ে যাই। সেখানে আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর একখন্ড জমি ছিল। আব্দুর রাহমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা কে বললেন , আমি আপনার নিকট একটি কথা বলতে চাই , মারওয়ান যদি এ বিষয়টি আমাকে কসম দিয়ে না বলতেন , তাহলে আমি তা আপনার সঙ্গে আলোচনা করতাম না। তারপর তিনি ‘আয়িশা (রাঃ) ও উম্মে সালামা (রাঃ) এর বর্ণিত উক্তিটি উল্লেখ করলেন , ফাযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) অনুরূপ একটি হাদীস আমাকে শুনিয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি সর্বাধিক অবহিত। হাম্মাম (রহঃ) এবং ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এরূপ ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ত্যাগ করে খাওয়ার হুকুম দিতেন। প্রথমোক্ত হাদীসটি সনদের দিক থেকে বিশুদ্ধ।
১৮০৪। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন। তবে তিনি তাঁর প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চাইতে অধিক সক্ষম ছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ)বলেন মানে হাজত বা চাহিদা। তাউস (রহঃ) বলেন, মানে বোধহীন , যার মেয়েদের প্রতি কোন খাহিশ নেই।
১৮০৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসআলা (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সায়িম অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন কোন স্ত্রীকে চুমু খেতেন। (একথা বলে) ‘আয়িশা (রাঃ) হেসে দিলেন।
১৮০৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উম্মে সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একই চাঁদরে আমি ছিলাম। এমন সময় আমার হায়য শুরু হল। তখন আমি আমার হায়যের কাপড় পরিধান করলাম। তিনি বললেন :তোমার কি হল? তোমার কি হায়য দেখো দিয়েছে? আমি বললাম , হ্যাঁ; তারপর আমি আবার তাঁর সঙ্গে চাঁদরের ভিতর ঢুকে পড়লাম। তিনি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে গোসল করতেন এবং সায়িম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে চুমু দিতেন।
১৮০৭। আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমজানো মাসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ভোর হত ইহতিলাম ব্যতীত (জুনুবী অবস্থায় )। তখন তিনি গোসল করতেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন।
১৮০৮। ইসমা‘ঈল (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু ‘আব্দুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট পৌছলাম। তিনি বললেন , আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি , তিনি ইহতিলাম ছাড়া স্ত্রী সহবাসের কারণে জুনুবী অবস্থায় সকাল পর্যন্ত থেকেছেন এবং এরপর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন। তারপর আমরা উম্মে সালামা (রাঃ) -এর নিকট গেলাম। তিনিও অনুরূপ কথাই বললেন। আবূ জা‘ফর বলেন , ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)- কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম , কোন ব্যাক্তি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করলে সে কি স্ত্রী সহবাসকারীর মত কাফ্ফারা আদায় করবে? তিনি বললেন, না; তুমি কি সে হাদীসগুলো সম্পর্কে জানো না যাতে বর্ণিত আছে যে, যুগ যুগ ধরে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করলেও তার কাযা অঅদায় হবে না?
১৮০৯। ‘আবদান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : রোযাদার ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।
১৮১০। ‘আবদান (রহঃ) হুমরান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উসমান (রাঃ) -কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখেছি। তিনি তিনবার হাতের উপর পানি ঢাললেন। এরপর তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন। তারপর তিনবার চেহারা (মুখমন্ডল) ধুইলেন। এরপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন এবং বামহাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন। এরপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। তারপর ডান পা তিনবার ধুইলেন তারপর বাম পা তিনবার ধুইলেন। এরপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখেছি আমার এ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মতই। এরপর তিনি বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার এ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং মনে মনে কোন কিছুর চিন্তা -ভাবনায় লিপ্ত হবে না , তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
১৮১১। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মুনীর (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এস বলল, সে তো জ্বলে গেছে। তিনি বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? লোকটি বলল , রমযানে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (খেজুর ভর্তি)ঝুড়ি এল , যাকে ‘আরাক (১৫ সা‘ পরিমাণ )বলা হয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অগ্নিদগ্ধ লোকটি কোথায়? লোকটি বলল , আমি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এগুলো সা’দকা করে দাও।
১৮১২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি এস বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমার কি হয়েছে? সে বলল , আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেন : তুমি কি একাধারে দু’মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারবে? সে বলল , না। এরপর তিনি বললেনঃষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন , আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল , আমি। তিনি বললেন : এগুলো নিয়ে সা’দকা করে দাও। তখন লোকটি বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থকে সা’দকা করব? আল্লাহর শপথ, মদিনার উভয় লাব ১ অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চাইতে অভাবগ্রস্থ কউ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। এরপর তিনি বললেন এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও।
১৮১৩। ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এস বলল , এই হতভাগা স্ত্রী সহবাস করেছে রমজানে। তিনি বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আজাদ করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ক্রমাগত দু’মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? লোকটি বলল , না। তিনি বললেন :তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ‘আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এগুলো তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে আহার করাও। লোকটি বলল , ! আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থ কে? অথচ মদিনার উভয় লাবার অর্থাৎ হররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চাইতে অধিক অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃতাহলে তোমার পরিবারকেই খাওয়াও।
১৮১৪। মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং সায়িম অবস্থায় ও শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
১৮১৫। আবূ মা’মার (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়িম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
১৮১৬। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) সাবিত আল-বুনানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ,। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) - কে প্রশ্ন করা হল , আপনারা কি সায়িমের শিঙ্গা লাগানো অপছন্দ করতেন? তিনি বললেন , না। তবে দূর্বল হয়ে যাবার কারণে অপছন্দ করতাম। শাবাবা (রহঃ) শু’বা, (রহঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।
১৮১৭। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , কোন এক সফরে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেন : সওয়ারী থেকে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল , ইয়া রাসুলাল্লাহ সূর্য এখনো ডুবেনি। তিনি বললেনঃ সওয়ারী থেকে নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে সওয়ারী থেকে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলে তিনি তা পান করলেন এবং হাতের ইশারায় বললেন : যখন দেখবে রাত এদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ব্যাক্তির ইফতারের সময় হয়েছে। জাবীর (রাঃ) এবং আবূ বাকর ইবনু ‘আইয়াশ (রাঃ) ইবনু আবূ ‘আওফা (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম।
১৮১৮। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , হামযা ইবনু ‘আমর আসলামী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি ক্রমাগত সিয়াম পালন করছি।
১৮১৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , হামযা ইবনু ‘আমর আসলামী (রাঃ) অধিক সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনে অভ্যস্থ ছিলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন , আমি সফরেও কি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারি? তিনি বললেন : ইচ্ছা করলে তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পার , আবার ইচ্ছা করলে নাও করতে পার।
১৮২০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র অবস্থায় কোন এক রমজানে মক্কার পথে যাত্রা করলেন। কাদীদ নামক স্থানে পৌছার পর তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করে ফেললে লোকেরা সকলেই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করলেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন , ‘উসফান ও কুদায়দ নামক দুই স্থানের মধ্যে কাদীদ একটি ঝর্ণা।
১৮২১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) অঅবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , কোন এক সফরে প্রচন্ড গরমের দিনে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। গরম এত প্রচন্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ হাত মাথার উপরে তুলে ধরেছিলেন। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) ছাড়া আমাদের কেউই সায়িম ছিল না।
১৮২২। আদম (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন , হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যাক্তিকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন : এর কী হয়েছে? লোকেরা বলল , সে সায়িম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সফরে সায়িম পালনে কোন নেকী নেই।
১৮২৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সফরে যেতাম সায়িম ব্যাক্তি গায়ের সায়িমকে (যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছে না)এবং গায়ের সায়িম ব্যাক্তি সায়িমকে দোষারোপ করত না।
১৮২৪। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা থেকে মক্কায় রওয়ানা হলেন। তখন তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছিলেন। ‘উসফানে পৌছার পর তিনি পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। তারপর তিনি লোকদেরকে দেখানোর জন্য পানি হাতের উপর উচুঁ করে ধরে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করলেন এবং এ অবস্থায় মক্কায় পৌছলেন। এ ছিল রমজানো মাসে। তাই ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গও করেছেন। যার ইচ্ছা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারে আর যার ইচ্ছা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করতে পারে।
১৮২৫। ‘আইয়াশ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি আয়াতটি পড়ে বলেছেন যে , ইহা রহিত।
১৮২৬। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমার উপর রমযানের যে কাযাথেকে যেত তা পরবর্তী সাবান ছাড়া আমি আদায় করতে পারতাম না। ইয়াহিয়া (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর ব্যস্ততার কারণে কিংবা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ব্যস্ততার কারণে।
১৮২৭। ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এ কথা কি ঠিক নয় যে হায়য শুরু হলে মেয়েরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেনা এবং সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ও পালন করে না। এ হল তাদের দ্বীনেরই ত্রুটি।
১৮২৮। মুহাম্মদ ইবনু খালিদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যাক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবকের পক্ষ থেকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আদায় করবে। ইবনু ওয়াহব (রহঃ) ‘আমর (রহঃ) থেকে উক্ত হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ূব (রহঃ) ইবনু আবূ জা’ফর (রহঃ) থেকেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
১৮২৯। মুহাম্মদ ইবনু ‘আব্দুর রাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যাক্তি এস বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার মা এক মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) জিম্মায় রেখে মারা গেছেন , আমি কি তার পক্ষ থেকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কাযা করতে পারি? তিনি বলেন: হ্যাঁ, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করাই হল অধিক যোগ্য। সুলায়মান (রহঃ) বলেন , হাকাম (রহঃ) এবং সালামা (রহঃ)বলেছেন , মুসলিম (রহঃ)এ হাদীস বর্ণনা করার সময় আমরা সকলেই একসাথে উপবিষ্ট ছিলাম তাঁরা উভয়েই বলেছেন যে , ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে মুজাহিদ (রহঃ)-কে এ হাদীস বর্ণনা করতে আমরা শুনেছি। আবূ খালিদ আহমার (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল , আমার বোন মারা গেছে। ইয়াহইয়া (রহঃ) ও আবূ ম‘আবিয়া ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল , আমার মা মারা গেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল , আমার মা মারা গেছে , অথচ তার যিম্মায় মানতের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) রয়েছে। আবূ হারীয (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার মা মারা গেছে , অথচ তার যিম্মায় পনর দিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) রয়ে গেছে।
১৮৩০। হুমাদী (রহঃ) ‘উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন রাত্র সে দিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায় , তখন সায়িম ইফতার করবে।
১৮৩১। ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আর তিনি ছিলেন সায়িম। যখন সূর্য ডুবে গেল তখন তিনি দলের কাউকে বললেন : হে উমুক! উঠ। আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেন : নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেন : নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেন : নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল , দিন তো আপনার এখনো রয়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর সে নামল এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আনল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেন , তারপর বললেন : যখন তোমরা দেখবে , রাত একদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে , তখন সায়িম ইফতার করবে।
১৮৩২। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম এবং তিনি রোযাদার ছিলেন। সূর্য অস্ত যেতেই তিনি বললেনঃ তুমি সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আর একটু সন্ধ্যা হতে দিন। তিনি বললেন : তুমি নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তিনি বললেন , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এখনো তো আপনার সামনে দিন রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তারপর তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং ছাতু গুলিয়ে আনলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইশারা করে বললেনঃযখন তোমরা দেখবে যে, রাত এদিক থেকে আসছে , তখনই রোযাদারদের ইফতারের সময় হয়ে গেল।
১৮৩৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াকত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।
১৮৩৪। আহমদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , এক সফরে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন। এরপর এক ব্যাক্তিকে বললেন : সওয়ারী হতে নেমে ছাতু গুলিয়ে আন। লোকটি বলল , আপনি যদি (পূর্ণ সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত)অপেক্ষা করতেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন : নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। (তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ)যখন তুমি এদিক (পূর্বদিক) হতে রাত্রির আগমন দেখতে পাবে তখন রোযাদার ইফতার করবে।
১৮৩৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার মেঘাচ্ছন্ন দিনে আমরা ইফতার করলাম , এরপর সূর্য দেখা যায়। বর্ণনাকারী হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হল , তাদের কি কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? হিশাম (রহঃ) বললেন, কাযা ছাড়া উপায় কি? (অপর বর্ণনাকারী)মা’মার (রহঃ) বলেন , আমি হিশামকে বলতে শুনেছি , তাঁরা কাযা করেছিলেন কি না তা আমি জানিনা।
১৮৩৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) রুবায়্যি‘ বিনত মু’আব্বিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র১ সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন : যে ব্যাক্তি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে , আর যার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) অবস্থায় সকাল হয়েছে , সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি) (রাঃ) বলেন , পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন রোযা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোযা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরী করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁধলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত ভুলিয়ে রাখতাম। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন , অর্থ পশম।
১৮৩৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করবে না। লোকেরা বলল , আপনি যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করেন? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি।
১৮৩৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ল। লাহ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল হতে নিষেধ করলেন। লোকেরা বললো , আপনি যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করেন! তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই , আমাকে পানাহার করানো হয়।
১৮৩৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে , তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করবে না। তোমাদের কউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করতে চাইলে সে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। লোকেরা বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করেন? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই , আমি রাত্রি যাপন করি এরূপ অবস্থায় যে , আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন যিনি আমাকে আহার করান এবং একজন পানীয় পরিবেশনকারী আমাকে পান করান।
১৮৪০। ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)ও মুহাম্মদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের উপর দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল হতে নিষেধ করলে তারা বলল, আপনি যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করে থাকেন! তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই , আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন , রাবী ‘উসমান (রহঃ) ‘তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
১৮৪১। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরতিহীন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে নিষেধ করলে মুসলিমদের এক ব্যাক্তি তাঁকে বলল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি যে বিরতীহীন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন? তিনি বললেন : তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছ? আমি এমনভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। এরপর যখন লোকেরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করা হতে বিরত থাকল না তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে দিনের পর দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করতে থাকলেন। এরপর লোকেরা যখন চাঁদ দেখতে পেল তখন তিনি বললেন : যদি চাঁদ উঠতে আরও দেরী হত তবে আমি তোমাদেরকে নিয়ে আরও বেশী দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করতাম। এ কথা তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান স্বরূপ বলেছিলেন, যখন তারা বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
১৮৪২। ইয়াহ্য়য়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করা থেকে বিরত থাক (বাক্যটি তিনি)দু’বার বললেন। তাঁকে বলা হল , আপনি তো সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করেন। তিনি বললেন : আমি এভাবে রাত যাপন করি যে , আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করার দায়িত্ব গ্রহণ করো।
১৮৪৩। ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) খেকে বর্ণিত , তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করবে না। তোমাদের কউ যদি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল করতে চায় , তবে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। সাহাবাগণ বললেন , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি তো সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) বেসাল পালন করেন? তিনি বললেন : আমি তোমাদের মত নই। আমি এভাবে রাত যাপন করি যে , আমার জন্য একজন আহারদাতা রয়েছেন যিনি আমাকে আহার করান , একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি আমাকে পান করান।
১৮৪৪। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান (রাঃ) ও আবূদ দারদা -এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একবার) সালমান (রাঃ) আবূদ দারদা (রাঃ) - এর সাথে সাক্ষাত করতে এস উম্মুদ দারদা (রাঃ) -কে মলিন কাপড় পরিহিত দেখতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মুদ দারদা (রাঃ) বললেন , আপনার ভাই আবূদ দারদার পার্থিব কোন কিছুর প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবূদ দারদা (রাঃ) এলন। তারপর তিনি সালমান (রাঃ)-এর জন্য আহার্য প্রস্তুত করান এবং বলেন , আপনি খেয়ে নিন , আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছি। সালমান (রাঃ) বললেন, আপনি না খেলে আমি খাবনা। এরপর আবূদ দারদা (রাঃ) সালমান (রাঃ) -এর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবূদ দারদা (রাঃ) (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে)দাঁড়াতে গেলেন। সালমান (রাঃ) বললেন, এখন ঘুমিয়ে যান। আবূদ দারদা (রাঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবূদ দারদা (রাঃ) আবার সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতে উদ্যত হলেন, সালমান (রাঃ) বললেন, ঘুমিয়ে যান। যখন রাতের শেষভাগ হল, সালমান (রাঃ) আবূদ দারদা (রাঃ) -কে বললেন , এখন দাঁড়ান। এরপর তারা দুজনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। পরে সালমান (রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনার প্রতিপালকের হক আপনার উপর আছে। আপনার নিজেরও হক আপনার উপর রয়েছে। আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে। প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবূদ দারদা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃসালমান ঠিকই বলেছে
১৮৪৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে (এত বেশী)সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন যে , আমরা বলাবলি করতাম , তিনি আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশী) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন না করা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে , আমরা বলাবলি করতাম , তিনি আর (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রমজানো ব্যতীত কোন পুরা মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে দেখিনি এবং শা’বান মাসের চেয়ে কোন মাসে বেশী (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে দেখিনি।
১৮৪৬। মুআ‘য ইবনু ফাযালা (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা‘বান মাসের চেয়ে বেশী (নাফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কোন মাসে পালন করতেন না। তিনি (প্রায়) পুরা শা’বান মাসই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন এবং বলতেন : তোমাদের সাধ্যে যতটুকু কুলোয় ততটুকু (নফল) আমল কর, কারণ তোমরা (আমল করতে করতে) ক্লান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা (সওয়াব দান )বন্ধ করেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় সালাত (নামায/নামাজ)ই ছিল তাই- যা যথাযথ নিয়মে সর্বদা আদায় করা হত। যদিও তা পরিমানে কম হত এবং তিনি যখন কোন (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন পরবর্তীতে তা অব্যাহত রাখতেন।
১৮৪৭। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত কোন মাসে পুরা মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন নাই। তিনি এমনভাবে (নফল)সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন যে , কউ বলতে চাইলে বলতে পারতো, আল্লাহর কসম! তিনি আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন পরিত্যাগ করবেন না। আবার এমনভাবে (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিতেন যে , কউ বলতে চাইলে বলতে পারতো আল্লাহর কসম! তিনি আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না।
১৮৪৮। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসে এভাবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দিতেন যে, আমরা মনে করতাম , তিনি এ মাসে আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন না। আবার কোন মাসে এভাবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি এ মাসে আর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছাড়বেন না। আর তুমি যদি তাঁকে রাতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়রত অবস্থায় দেখতে চাইতে তবে তা দেখতে পেতে, আবার যদি তুমি তাঁকে ঘুমন্ত দেখতে চাইতে তবে তাও দেখতে পেতে। সুলা্য়মান (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) সূত্রে বলেন যে, তিনি আনাস (রাঃ) -কে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন।
১৮৪৯। মুহাম্মদ (রহঃ) হুমাইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি আনাস (রাঃ) -কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নফল সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন , যে কোন মাসে আমি তাঁকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনরত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি , তাঁকে সে অবস্থায় দেখেছি, আবার তাঁকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন না করা অবস্থায় দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। রাতে যদি তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়রত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি , তা প্রত্যক্ষ করেছি। আবার ঘুমন্ত দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত মুবারক হতে নরম কোন পশমী বা রেশমী কাপড় স্পর্শ করি নাই। আর আমি তাঁর (শরীরের) ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধযুক্ত কোন মিশক বা আম্বর পাইনি।
১৮৫০। ইসহাক (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। এরপর তিনি [‘আবদুল্লাহ (রাঃ)] হাদীসটি বর্ণনা করেন অর্থাৎ “তোমার উপর মেহমানের হক আছে , তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। ” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) দাউদ (‘আ) কি? তিনি বললেন , “অর্ধেক বছর”(-এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা)।
১৮৫১। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘ আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : হে আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং সারারাত সালঅত আদায় করে থাক। আমি বললাম , ঠিক (শুনেছেন) ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন : এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে )সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর আবার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়েও দাও। (রাতে)সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে , তোমার চোখের হক রয়েছে , তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে , তোমার তমহমানের হক আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে , তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। কেননা নেক আমলের পরিবর্তে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হয়ে যায়। আমি বললাম আমি এর চেয়েও কঠোর আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন আমলের অনুমতি দেয়া হল। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আরো বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃতবে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর , এর থেকে বেশী করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কেমন? তিনি বললেন : অর্ধেক বছর। রাবী বলেন , ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে বলতেন , আহা! আমি যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবূল করে নিতাম!
১৮৫২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আমার সম্পর্কে এ কথা পৌছে যায় যে, আমি বলেছি , আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করব এবং রাতভর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করায় আমি বললাম , আপনার উপর আমার পিতামাতা কুরবান হোক! আমি একথা বলেছি। তিনি বললেনঃতুমি ত এরূপ করতে সক্ষম হবে না। বরং তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর ও ছেড়েও দাও, (রাতে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর ও নিদ্রা যাও। তুমি মাসে তিন দিন করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। কারণ নেক কাজের ফল তার দশ গুন ; এভাবেই সারা বছরের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন হয়ে যাবে। আমি বললাম আমিএর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন : তাহলে একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং দুদিন ছেড়ে দাও। আমি বললাম আমিএর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন : তাহলে একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং একদিন ছেড়ে দাও। এই হল দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) এবং এই হল সর্বোত্তম (সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম))। আমি বললাম , আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এর চেয়ে উত্তম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) (রাখার পদ্ধতি)আর নেই।
১৮৫৩। ‘আমর ইবনু আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ সংবাদ পৌছে যে , আমি একটানা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করি এবং রাতভর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। এরপর হয়ত তিনি আমার কাছে লোক পাঠালেন অথবা আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বললেন : আমি কি এ কথা ঠিক শুনি নাই যে , তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে থাক আর ছাড় না এবং তুমি (রাতভর) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে থাক আর ঘুমাও না?(রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন):তুমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং মাঝে মাঝে তা ছেড়েও দাও। রাতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর এবং নিদ্রাও যাও। কেননা তোমার উপর তোমার চোখের হক রয়েছে এবং তোমার নিজের শরীরেরও ও তোমার পরিবারের হক তোমার উপর আছে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন , আমি এর চেয়ে বেশী শক্তি রাখি। তিনি [ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে তুমি দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সিয়াম পালন কর। রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন , তা কিভাবে? তিনি বললেন : দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন , একদিন ছেড়ে দিতেন এবং তিনি (শত্রুর) সম্মুখীন হলে পলায়ন করতেন না। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমাকে এ শক্তি কে যোগাবে? বর্ণনাকারী ‘আতা (রহঃ) বলেন , (এই হাদীসে)কিভাবে সব সময়ের সিয়ামের প্রসঙ্গ আসে সে কথাটুকু আমার মনে নেই (অবশ্য) এতটুকু মনে আছে যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার এ কথাটি বলেছেন , সব সময়ের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কোন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) নয়।
১৮৫৪। মুহম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তুমি প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন , আমি এর চাইতে বেশী করার শক্তি রাখি। এভাবে তিনি বৃদ্ধির আবেদন করতে লাগলেন যে , অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং একদিন ছেড়ে দাও এবং আরও বললেন : প্রতি মাসে (এক খতম)কুরআন পাঠ কর। তিনি বললেন আমি এর চেয়ে বেশী শক্তি রাখি। এভাবে বলতে লাগলেন , অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে তিন দিনে (পাঠ কর )।
১৮৫৫। আদম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি সব সময় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর এবং রাতভর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে থাক? আমি বললাম , জী হাঁ। তিনি বললেন তুমি এরূপ করলে চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। যে সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে সে যেন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে না। মাসে তিন দিন করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের সমতূল্য। আমি বললাম আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর , তিনি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন এবং যখন শত্রুর সম্মুখীন হতেন তখন পলায়ন করতেন না।
১৮৫৬। ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত , তিনি বলেন যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র আলোচনা করায় তিনি আমার এখানে আগমন করেন। আমি তাঁর জন্য খেজুরের ছালে পরিপূর্ণ চামড়ার বালিশ (হেলান দিয়ে বসার জন্য) পেশ করলাম। তিনি মাটিতে বসে পড়লেন। বালিশটি তাঁর ও আমার মাঝে পড়ে থাকল। তিনি বললেনঃপ্রতি মাসে তুমি তিন দিন রোযা রাখলে হয়না? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন , আমি বললাম , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (আরো)। তিনি বললেন সাতদিন। আমি বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন : নয় দিন। আমি বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ! (আরো)। তিনি বললেন : এগারো দিন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র চেয়ে উত্তম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আর হয় না - অর্ধেক বছর , একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর ও একদিন ছেড়ে দাও।
১৮৫৭। আবূ মা‘মার (রহঃ) আবূ হূরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , আমার বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন , প্রতি মাসে তিন দিন করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা এবং দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ)ুয -যুহা এবং ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা।
১৮৫৮। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার মাতা )উম্মে সুলাইম (রাঃ) -এর ঘরে আগমান করলেন। তিনি তাঁর সামনে খেজুর ও ঘি পেশ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদের ঘি মশকে এবং খেজুর তার বরতনে রেখে দাও। কারণ আমি রোযাদার। এরপর তিনি ঘরের এক পাশে গিয়ে নফল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং উম্মে সুলাইম (রাঃ) ও তাঁর পরিজনের জন্য দুআ করলেন। উম্মে সুলাইম আরয করলেন , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার একটি ছোট ছেলে আছে। তিনি বললেনঃ কে সে? উম্মে সুলাইম (রাঃ) বললেন, আপনার খাদেম আনাস। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যানের দু‘আ করলেন। তিনি বললেন : হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাল ও সন্তান-সন্ততি দান কর এবং তাকে বরকত দাও। আনাস (রাঃ) বলেন , আমি আনসারগণের মধ্যে অধিক সম্পদশালীদের একজন এবং আমার কন্যা আমাকে জানিয়েছে যে , হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ)- এর বসরায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত একশত বিশের অধিক আমার সন্তান মারা গেছে।
১৮৫৯। ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) আনাস (রাঃ) -কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন।
১৮৬০। সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অথবা (রাবী বলেন) অন্য এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করেন এবং ‘ইমরান (রাঃ)তা শুনেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে অমুকের পিতা! তুমি কি এ মাসের শেষভাগে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করনি? (রাবী) বলেন , আমার মনে হয় (আমার ওস্তাদ)বলেছেন , অর্থাৎ রমযান। লোকটি উত্তর দিল , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! না। তিনি বললেনঃ যখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন শেষ করবে তখন দু’দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে নিবে। আমার মনে হয় সালত (রহঃ) রমযান মব্দটি বর্ণনা করেননি। সাবিত (রহঃ) ‘ইমরান সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শাবানের শেষভাগে বলে উল্লেখ করেছেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন, শা’বান শব্দটি অধিকতর সহীহ।
১৮৬১। আবূ ‘আসিম (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু ‘আব্বাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জুমু‘আর দিনে (নফল)সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে নিষেধ করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন , হাঁ। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ব্যতীত অন্যেরা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে , পৃথকভাবে জুমু‘আর দিনের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন (-কে নিষেধ করেছেন )।
১৮৬২। ‘উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে , তোমাদের কউ যেন শুধু জুমু‘আর দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন না করে কিন্তু তার আগে একদিন বা পরের দিন (যদি পালন করে তবে জুমু‘আর দিনে পালন করা যায়)
১৮৬৩। মূসা’দ্দাদ ও মুহাম্মদ (রহঃ) জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিনে তাঁর নিকট প্রবেশ করেন তখন তিনি (জুযাইরিয়া)সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনরত ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি গতকাল সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছিলে? তিনি বললেন , না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কি আগামীকাল সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের ইচ্ছা রাখ? তিনি বললেন , না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভেঙ্গে ফেল। হাম্মাদ ইবনুল জা‘দ (রহঃ) স্বীয় সূত্রে জুয়াইরিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আদেশ দেন এবং তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করেন।
১৮৬৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মুল ফাযর বিনত হারিস (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে , কিছুসংখ্যক লোক ‘ আরাফাতের দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন সম্পর্কে তাঁর কাছে সন্দেহ প্রকাশ করে। তাদের কউ বলল , তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন। আর কউ বলল , না, তিনি করেন নাই। এতে উম্মুল ফাযল (রাঃ) এক পেয়ালা দুধ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং তিনি তা পান করে নিলেন। এ সময় তিনি উঠের পিঠে (‘আরাফাতে)উকূফ অবস্থায় ছিলেন।
১৮৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কিছু সংখ্যক লোক ‘আরাফাতের দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলে তিনি স্বল্প পরিমান দুধ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর নিকট পাঠিয়ে দিলে তিনি তা পান করলেন ও লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করছিল। তখন তিনি (‘আরাফাতে)আবস্থান স্থলে ওকূফ করছিলেন।
১৮৬৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) বনূ আযহারের আযাদকৃত গোলাম আবূ ‘উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি একবার ঈদে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -এর সঙ্গে ছিলাম , তখন তিনি বললেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুই দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে নিষেধ করেছেন। (ঈদুল ফিতরের দিন)যে দিন তোমরা তোমাদের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ছেড়ে দাও। আরেক দিন , যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর গোশত খাও। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন , ইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ) বলেন , যিনি ইবনু আযহারের মাওলা বলে উল্লেখ করেছেন , তিনি ঠিক বর্ণনা করেছেন ; আর যিনি ‘আব্দুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) - এর মাওলা বলেছেন , তিনিও ঠিক বর্ণনা করেছেন।
১৮৬৮। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর ঈদের দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা থেকে , ‘সাম্মা ’ ধরনের কাপড় পরিধান করতে , এক কাপড় পরিধানরত অবস্থায় দুই হাঁটু তুলে নিতম্বের উপর বসতে (কেননা এত সতর প্রকাশ পাওয়ার আশংকা রয়েছে)এবং ফজর ও ‘আসরের পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন।

Thursday, 13 August 2015

GOSOL/BATHING IN SAHI BUKHARI SHARIF BENGALI

২৪৬। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু’টো ধুয়ে নিতেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন। তারপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। তারপর তাঁর উভয় হাতের তিন আঁজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি পৌঁছিয়ে দিতেন।
২৪৭। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন, অবশ্য পা দুটো ছাড়া এবং তাঁর লজ্জাস্থান ও যে যে স্থানে নাপাক লেগেছে তা ধুয়ে নিলেন। তারপর নিজের উপর পানি ঢেলে দেন। তারপর সেখান থেকে সরে গিয়ে পা দুটো ধুয়ে নেন। এই ছিল তাঁর জানবাতের গোসল।
২৪৮। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রে (কাদাহ) থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো।
২৪৯। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ভাই ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তাঁর ভাই তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি প্রায় এক সা’ (তিন কেজির চেয়ে কিছু পরিমাণ বেশি)-এর সমপরিমান এক পাত্র আনালেন। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং নিজের মাথার উপর পানি ঢাললেন। তখন আমাদের ও তাঁর মাঝে পর্দা ছিল। আবূ ‘আবদুল্লাহ [বুখারী (রাঃ)] বলেন যে, ইয়াযীদ ইবনু হারূন (রহঃ), বাহয ও জুদ্দী (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে নাহওমিন শায়ি এর পরিবর্তে ক্বাদরই শায়ি (এক সা’ পরিমাণ)-এর কথা বর্ণনা করেন।
২৫০। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ জা’ফর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ও তাঁর পিতা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর কাছে ছিলেন। সেখানে আরো কিছু লোক ছিলেন। তাঁরা তাঁকে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এক সা’ তোমার জন্য যথেষ্ট। তখন এক ব্যাক্তি বলে উঠলঃ আমার জন্য তা যথেষ্ট নয়। জাবির (রাঃ) বললেনঃ যাঁর মাথায় তোমার চাইতে বেশি চুল ছিল এবং তোমার চাইতে যিনি উত্তম ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য তো এ পরিমাণই যথেষ্ট ছিল। তারপর তিনি এক কাপড়ে আমাদের ইমামতি করেন।
২৫১। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মায়মূনা (রাঃ) একই পাত্রের পানি দ্বারা গোসল করতেন। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ) তাঁর শেষ জীবনে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে মায়মূনা (রাঃ) থেকে ইহা বর্ণনা করতেন। তবে আবূ নু’আয়ম (রাঃ)-এর বর্ণনাই ঠিক।
২৫২। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুত’ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মাথায় তিনবার পানি ঢেলে থাকি। এই বলে তিনি উভয় হাতের দ্বারা ইশারা করেন।
২৫৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন।
২৫৪। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) আবূ জা’ফর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাকে জাবির (রাঃ) বলেছেন, আমার কাছে তোমার চাচাত ভাই অর্থাৎ হাসান ইবনু মুহাম্মদ ইবনু হানাফিয়্যা এসেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, জানবাতের গোসল কিভাবে করতে হয়? আমি বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন আঁজলা পানি নিতেন এবং নিজের মাথার উপর ঢেলে দিতেন। তারপর নিজের সারা দেহে পানি পৌঁছিয়ে দিতেন। তখন হাসান আমাকে বললেন, আমার মাথার চুল খুব বেশি। আমি তাঁকে বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল তোমার চেয়ে অধিক ছিল।
২৫৫। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তিনি তাঁর হাত দু’বার বা তিনবার ধুয়ে নিলেন। পরে তাঁর বাম হাতে পানি নিয়ে তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে হাত ঘষলেন। তারপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন আর তাঁর চেহারা ও দু’হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর তাঁর সারা দেহে পানি ঢাললেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন।
২৫৬। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানবাতের গোসল করতেন, তখন হিলাবের অনুরূপ পাত্র চেয়ে নিতেন। তারপর এক আঁজলা পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান পাশ এবং পরে বাম পাশ ধুয়ে ফেলতেন। দু’হাতে মাথার মাঝখানে পানি ঢালতেন।
২৫৭। উমর ইবনু হাফস্ ইবনু গিয়াস (রহঃ) ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের পানি ঢেলে রাখলাম। তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতে পানি ঢাললেন এবং উভয় হাত ধুইলেন। এরপর তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে নিলেন এবং মাটিতে তাঁর হাত ঘষে নিলেন। পরে তা ধুয়ে কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, তারপর তাঁর চেহারা ধুইলেন এবং মাথার উপর পানি ঢাললেন। পরে ঐ স্থান থেকে সরে গিয়ে দুই পা ধুইলেন। অবশেষে তাঁকে একটি রুমাল দেওয়া হল, কিন্তু তিনি তা দিয়ে শরীর মুছলেন না।
২৫৮। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর হুমায়দী (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানবাতের গোসল করলেন। তিনি নিজের লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর হাত ঘষলেন এবং তা ধুইলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। গোসল শেষ করে তিনি তাঁর দু পা ধুইলেন।
২৫৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রের পানি দিয়ে এভাবে গোসল করতাম যে, তাতে আমাদের দু’জনের হাত একের পর এক পড়তে থাকত।
২৬০। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানবাতের গোসল করার সময় প্রথমে হাত ধুয়ে নিতেন।
২৬১। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রের পানি দিয়ে জানবাতের গোসল করতাম। ‘আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
২৬২। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার স্ত্রীদের কেউ কেউ একই পাত্রের পানি নিয়ে গোসল করতেন। মুসলিম (রহঃ) এবং ওয়াহ্ব ইবনু জারীর (রহঃ) শু’বা (রাঃ) থেকে ‘তা ফরয গোসল ছিল’ বলে বর্ণনা করেছেন।
২৬৩। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) মায়মূনা বিনত হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য পানি রেখে পর্দা করে দিলাম। তিনি পানি দিয়ে দু’বার কিংবা তিনবার হাত ধুইলেন। সুলায়মান (রহঃ) বলেন, তৃতীয়বারের কথা বলেছেন কিনা মনে পড়ে না। তখন তিনি ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতে ঢাললেন এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে নিলেন। তারপর তাঁর হাত মাটিতে বা দেওয়ালে ঘষলেন। পরে তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন এবং তাঁর চেহারা ও দু’ হাত ধুইলেন এবং মাথা ধুয়ে ফেললেন্ তারপর তাঁর শরীরে পানি ঢেলে দিলেন। পরে সেখান থেকে সরে গিয়ে তাঁর দু’পা ধুইলেন। অবশেষে আমি তাঁকে একখন্ড কাপড় দিলাম; কিন্তু তিনি হাতের ইশারায় নিষেধ করলেন এবং তা নিলেন না।
২৬৪। মুহাম্মদ ইবনু মাহবূব (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম, তিনি উভয় হাতে পানি ঢেলে দু’বার করে বা তিনবার করে তা ধুইয়ে নিলেন। এরপর তিনি ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতে ঢাললেন এবং তাঁর লজ্জাস্থান ধুইলেন। পরে তাঁর হাত মাটিতে ঘষলেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তারপর তাঁর মাথা তিনবার ধুইলেন এবং তাঁর সারা শরীরে পানি ঢাললেন। অবশেষে সেখান থেকে একটু সরে গিয়ে তাঁর দু’পা ধুয়ে ফেললেন।
২৬৫। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে [আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)]-এর উক্তিটি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ আবূ ‘আবদুর রহমানকে রহম করুন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুশবু লাগাতাম, তারপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তারপর ভোরবেলায় এমন অবস্থায় ইহ্‌রাম বাঁধতেন যে, তাঁর দেহ থেকে খুশবু ছড়িয়ে পড়তো।
২৬৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের কাছে দিনের বা রাতের কোন এক সময় পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। তাঁরা ছিলেন এগারজন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম যে, তাঁকে ত্রিশজনের শক্তি দেওয়া হয়েছে। সা’ঈদ (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আনাস (রাঃ) তাঁদের কাছে হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে (এগারজনের স্থলে) নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন।
২৬৭। আবূল ওলীদ (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার অধিক মযী বের হতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা আমার স্ত্রী হওয়ার কারনে আমি একজনকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠালাম। তিনি প্রশ্ন করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উযূ (ওজু/অজু/অযু) কর এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেল।
২৬৮। আবূ নু’মান (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর উক্তি উল্লেখ করলাম, -“আমি এমন অবস্থায় ইহরাম বাঁধা পছন্দ করি না, যাতে সকালে আমার দেহ থেকে খুশবু ছড়িয়ে পড়ে। ” ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সুগন্ধি লাগিয়েছি, তারপর তিনি পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন এবং তাঁর ইহ্‌রাম অবস্থায় প্রভাত হয়েছে।
২৬৯। আদম ইবনু (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি যেন এখনো দেখছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ্‌রাম অবস্থায় তাঁর সিথিতে খুশবুর ঔজ্জ্বল্য রয়েছে।
২৭০। আবদান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবতের গোসল করতেন, তখন তিনি দু’হাত ধুইতেন এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন। তারপর গোসল করতেন। পরে তাঁর হাত দিয়ে চুল খিলাল করতেন। চামড়া ভিজেছে বলে যখন তিনি নিশ্চিত হতেন, তখন তাতে তিনবার পানি ঢালতেন। তারপর সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) আরো বলেছেনঃ আমি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। আমরা একই সাথে তা থেকে আঁজলা ভরে পানি নিতাম।
২৭১। ইউসুফ ইবনু ‘ঈসা (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানবাতের গোসলের জন্য পানি রাখলেন। তারপর দু’বার বা তিনবার ডান হাতে বাম হাতের উপর পানি ঢাললেন এবং তাঁর লজ্জাস্থান ধুইলেন। তারপর তাঁর হাত মাটিতে বা দেওয়ালে দু’বার বা তিনবার ঘষলেন। পরে তিনি কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন এবং চেহারা ও দু’হাত ধুইলেন। তারপর তাঁর মাথায় পানি ঢাললেন এবং তাঁর শরীর ধুইলেন। একটু সরে গিয়ে তাঁর দুই পা ধুইলেন। মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি একখন্ড কাপড় দিলে তিনি তা নিলেন না, বরং নিজ হাতে পানি ঝেড়ে ফেলতে থাকলেন।
২৭২। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত দেওয়া হলে সবাই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করছিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে বেরিয়ে আসলেন। তিনি মূসাল্লায় দাঁড়ালে তাঁর মনে হল যে, তিনি জানবাত অবস্থায় আছেন। তখন তিনি আমাদের বললেনঃ স্ব স্ব স্থানে দাঁড়িয়ে থাক। তিনি ফিরে গিয়ে গোসল করে আবার আমাদের সামনে আসলেন এবং তাঁর মাথা থেকে পানি ঝরছিল। তিনি তাকবীর (তাহ্‌রীমা) বাঁধলেন, আর আমরাও তাঁর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম।
২৭৩। আবদান (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম এবং কাপড় দিয়ে পর্দা করে দিলাম। তিনি দু’হাতের উপর পানি ঢেলে উভয় হাত ধুয়ে নিলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুইলেন। পরে হাতে মাটি লাগিয়ে ঘষে নিলেন এবং ধুয়ে ফেললেন। এরপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, চেহারা ও দু’হাত (কনুই পর্যন্ত) ধুইলেন। তারপর মাথায় পানি ঢাললেন ও সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছালেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন। এরপর আমি তাঁকে কাপড় দিলাম কিন্তু তিনি তা নিলেন না। তিনি দু’হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন।
২৭৪। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাদের কারও জানবাতের গোসলের প্রয়োজন হলে সে দু’হাতে পনি নিয়ে তিনবার মাথায় ঢালত। পরে হাতে পানি নিয়ে ডান পাশে তিনবার এবং আবার হাতে পানি নিয়ে বাম পাশে তিনবার ঢালত।
২৭৫। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করত। কিন্তু মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাকী গোসল করতেন। এতে বনী ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহর কসম! মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘কোষবৃদ্ধি’ রোগের কারনেই আমাদের সাথে গোসল করে না। একবার মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম “পাথর! আমার কাপড় দাও, পাথর! আমার কাপড় দাও” বলে পেছন পেছন ছুটলেন। এদিকে বনী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলল, আল্লাহর কসম! মূসার কোন রোগ নেই। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটি পিটুনির দাগ পড়ে গেল।আবূ হুরায়রা (রাঃ) আরো বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক সময় আইয়ূব আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করছিলেন। তখন তাঁর উপর সোনার পঙ্গপেল বর্ষিত হচ্ছিল। আইয়ূব আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাপড়ে সেগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। তখন তাঁর রব তাঁকে বললেনঃ হে আইয়ূব! আমি কি তোমাকে এগুলো থেকে অমুখাপেক্ষী করিনি? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ, আপনার ইয্যতের কসম! অবশ্যই করেছেন। তবে আমি আপনার বরকত থেকে বেনিয়ায নেই। এভাবে বর্ণনা করেছেন ইব্রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একবার আইয়ূব আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করেছিলেন।
২৭৬। আবদুল্লাহ ইবনু মুসলি (রহঃ) উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে তাঁকে গোসলরত অবস্থায় দেখলাম, ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রেখেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইনি কে? আমি বললামঃ আমি উম্মে হানী।
২৭৭। আবদান (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর্দা করেছিলাম আর তিনি জানবাতের গোসল করছিলেন। তিনি দু’হাত ধুইলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান এবং যেখানে কিছু লেগেছিল তা ধুয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে বা দেওয়ালে হাত ঘষলেন এবং দু’পা ছাড়া সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মতই উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর তাঁর সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছালেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুইলেন। আবূ আওয়ানা (রহঃ) ও ইবনু ফুযাইল (রহঃ) সতর(পর্দা করা)-এর ব্যাপারটি এই হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
২৭৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ তালহা (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে সুলায়ম (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে এসে বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ্ তা’আলা হকের ব্যাপারে লজ্জা করেন না। স্ত্রীলোকের ইহ্‌তিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে কি গোসল ফরয হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যঁ। , যদি তারা বীর্য দেখে।
২৭৯। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ তাঁর সঙ্গে মদিনার কোন এক পথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখা হল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তখন জানবাতেরঅবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজেকে নাপাক মনে করে সরে পড়লাম। পরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) গোসল করে এলেন। পুনরায় সাক্ষাৎ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ আবূ হুরায়রা! কোথায় ছিলে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি জানবাতেরঅবস্থায় আপনার সঙ্গে বসা সমীচীন মনে করিনি। তিনি বললেনঃ সুবাহানাল্লাহ্! মু’মিন নাপাক হয় না।
২৮০। আবদুল্লাহ আ’লা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাতে পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তখন তাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন।
২৮১। আয়্যাশ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার সঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হল, তখন আমি জুনুবী ছিলাম। তিনি আমার হাত ধরলেন, আমি তাঁর সঙ্গে চললাম। এক স্থানে তিনি বসে পড়লেন। তখন আমি সরে পড়ে বাসস্থানে এসে গোসল করলাম। আবার তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে বসা অবস্থায় পেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ আবূ হুরায়রা! কোথায় ছিলে? আমি তাঁকে (ঘটনা) বললাম। তখন তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ্! মু’মিন অপবিত্র হয় না।
২৮২। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জানবাতেরঅবস্থায় ঘুমাতেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিতেন।
২৮৩। কুতাইবা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ‘উমর ইবনুু’ল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমাদের কেউ জানবাতেরঅবস্থায় ঘুমাতে পারবে কি? তিনি বললেনঃ হাঁ, উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিলে জানবাতেরঅবস্থায়ও ঘুমাতে পারে।
২৮৪। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানবাতেরঅবস্থায় ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি লজ্জাস্থান ধুয়ে সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন।
২৮৫। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘উমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমাদের কেউ জুনুবী অবস্থায় ঘুমাতে পারবে কি? তিনি বললেনঃ হাঁ, যদি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নেয়।
২৮৬। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, রাত্রে কোন সময় তাঁর জানবাতের গোসল ফরয হয় (তখন কি করতে হবে?) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে, লজ্জাস্থান ধুয়ে নিবে, তারপর ঘুমাবে।
২৮৭। মু‘আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ও আবূ নু’য়ম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সঙ্গত হলে, গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। ‘আমর (রহঃ) শু’বার সূত্রে এই হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর মূসা (রহঃ) হাসান [বসরী (রহঃ)] সূত্রেও অনুরূপ বলেছেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ এটা উত্তম ও অধিকতর মজবুত। মতভেদের করনে আমরা অন্য হাদীসটিও বর্ণনা করেছি, গোসল করাই অধিকতর সাবধানতা।
২৮৮। আবূ মা’মার (রহঃ) যায়দ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ স্বামী-স্ত্রী সংগত হলে যদি মনি বের হয় (তখন কি করবে)? উসমান (রাঃ) বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। ‘উসমান (রাঃ) বলেনঃ আমি এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। এরপর ‘আলী ইবনু আবূ তালিব, যুবায়র ইবনুল-আওওয়াম, তালহা ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ্ ও উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাঁরা সবাই ঐ একই জবাব দিয়েছেন। আবূ সালামা (রহঃ) আবূ আয়্যূব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি [ আবূ আবয়্যূব (রাঃ)] এ কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন।
২৮৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হলে যদি বীর্য বের না হয় (তার হুকুম কি)? তিনি বললেনঃ স্ত্রীর থেকে যা লেগেছে তা ধুয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। আবূদুল্লাহ্ [বুখারী (রহঃ)] বলেনঃ গোসল করাই শ্রেয়। আর তা-ই সর্বশেষ হুকুম। আমি এই শেষের হাদীসটি বর্ণনা করেছি মতভেদ থাকার কারনে। কিন্তু পানি (গোসল) অধিক পবিত্রকারী।

Monday, 10 August 2015

NAMAZ IN SAHI BUKHARI SHARIF

৩৪২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমার ঘরের ছাদ খুলে দেয়া হল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। তারপর জিবরাঈল (‘আ) এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা যমযমের পানি দিয়ে ধুইলেন। এরপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তারপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আসমানের দিকে নিয়ে চললেন। যখন দুনিয়ার আসমানে পৌঁছালাম, তখন জিবরাঈল (‘আ) আসমানের রক্ষক কে বললেনঃ দরযা খোল। তিনি বললেনঃ কে? উত্তর দিলেনঃ আমি জিবরাঈল, আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনার সঙ্গে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মদ। তিনি আবার বললেনঃ তাঁকে কি আহবান করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেনঃ হাঁ।

তারপর আসমান খোলা হলে আমরা প্রথম আসমানে উঠলাম। সেখানে দেখলাম, এক লোক বসে আছেন এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি তাঁর ডান পাশে রয়েছে এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি বাম পাশেও রয়েছে। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন, হাসছেন আর যখন তিনি বাম দিকে তাকাচ্ছেন, কাঁদছেন। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ, হে পুণ্যবান নাবী! হে নেক সন্তান! আমি জিবরাঈল (‘আ) কে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইনি কে? তিনি বললেনঃ ইনি আদম (‘আ)। আর তাঁর ডানে ও বায়ে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বা দিকের লোকেরা জাহান্নামী। এজন্য তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন আর বাঁ দিকে তাকালে কাঁদেন। তারপর জিবরাঈল (‘আ) আমাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে উঠলেন। সেখানে উঠে রক্ষক কে বললেনঃ দরযা খোল। তখন রক্ষক প্রথম আসমানের রক্ষকের অনুরুপ প্রশ্ন করলেন। তারপর দরযা খুলে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর আবূ যার বলেনঃ তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) আসমানসমূহে আদম (‘আ), ঈদরীস (‘আ), মূসা (‘আ), ‘ঈসা (‘আ), ও ইবরাহীম (‘আ)-কে পেলেন। আবূ যার (রাঃ) তাঁদের অবস্থান নির্দিষ্ট ভাবে বলেন নি। কেবল এতটুকু বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম (‘আ)-কে প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (‘আ)-কে ষষ্ট আসমানে পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ যখন জিবরাঈল (‘আ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে ইদরীস (‘আ) এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঈদরীস (‘আ) বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নাবী ও নেক ভাই! আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরাঈল (‘আ) বললেনঃ ইনি ঈদরীস (‘আ)। তারপর আমি মূসা (‘আ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি বললাম ইনি কে? জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ মূসা (‘আ)। তারপর আমি ঈসা (‘আ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইনি ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

তারপর ইবরাহীম (‘আ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইনি ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন যে, ইবনু হাযম আমাকে খবর দিয়েছেন ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী (রহঃ) উভয়ে বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল, আমি এমন এক সমতল স্থানে উপনীত হলাম, যেখান থেকে কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবনু হাযম (রহঃ) ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করে দিলেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তনকালে যখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন? আমি বললামঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না।

আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ পাক কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আবার গেলাম আর বললামঃ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হল। আবার মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গেলাম, এবারো তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি আবার গেলাম, তখন আল্লাহ বললেনঃ এই পাঁচই (সওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (গণ্য হবে)। আমার কথার কোন পরিবর্তন নেই। আমি আবার মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে আসলে তিনি আমাকে আবারো বলললেনঃ আপনার রবের কাছে আবার যান। আমি বললামঃ আবার আমার রবের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তারপর জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে ঢাকা ছিল, যার তাৎপর্য আমার জানা ছিল না। তারপর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হল। আমি দেখলাম তাতে মুক্তার হার রয়েছে আর তাঁর মাটি কস্তুরি।
৩৪৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মু’ল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মুকীম অবস্থায় ও সফরে দুই রাক’আত করে সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছিলেন। পরে সফরে সালাত (নামায/নামাজ) পূর্বের মত রাখা হল আর মুকীম অবস্থায় সালাত (নামায/নামাজ) বৃদ্ধি করা হল।
৩৪৪। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উম্মে ;আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে ঋতুবতী এবং পর্দানশীন মহিলাদের বের করে আনার নির্দেশ দিলেন, যাতে তাঁরা মুসলমানদের জামা’আত ও দু’আয় শরীক হতে পারে। অবশ্য ঋতুবতী মহিলারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান থেকে দূরে থাকবে। এক মহিলা বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমাদের কারো কারো ওড়না নেই। তিনি বললেনঃ তাঁর সাথীর উচিত তাঁকে নিজের ওড়না থেকে পরিয়ে দেওয়া। আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) সুত্রে উম্মে ‘আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরুপ বলতে শুনেছি।
৩৪৫। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা জাবির (রাঃ) কাঁধে তহবন্দ বেঁধে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আর তাঁর কাপড় (জামা) আলনায় রক্ষিত ছিল। তখন তাঁকে এক ব্যাক্তি বললঃ আপনি যে এক তহবন্দ পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ তোমার মত আহাম্মকদের দেখানর জন্য আমি এরুপ করেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর যুগে আমাদের মধ্যে কারই বা দু’টো কাপড় ছিল?
৩৪৬। মুতাররিফ আবূ মূসা’আব (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জাবির (রাঃ)-কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। আর তিনি বলেছেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।
৩৪৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) ’উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, আর তাঁর উভয় প্রান্ত বিপরীত দিকে রাখলেন।
৩৪৮। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে উম্মে সালামা (রাঃ)-এর ঘরে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। তিনি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] সে কাপড়ের উভয় প্রান্ত নিজের উভয় কাঁধে রেখেছিলেন।
৩৪৯। উবায়দ ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে এক কাপড় জড়িয়ে উম্মে সালামা (রাঃ)-এর ঘরে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি, যার উভয় প্রান্ত তাঁর উভয় কাঁধের উপর রেখেছিলেন।
৩৫০। ইসমা’ঈল ইবনু আবূ উওয়ায়স (রহঃ) উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমি বিজয়ের বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রখেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ কে? আমি উত্তর দিলামঃ আমি উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব। তিনি বললেনঃ মারহাবা, হে উম্মে হানী! গোসল করার পরে তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলে তাঁকে আমি বললামঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমার সহোদর ভাই [‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)] এক লোককে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি সে লোকটিকে আশ্রয় দিয়েছি। সে লোকটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাঁকে আশ্রয় দিলাম। উম্মে হানী (রাঃ) বলেনঃ তখন ছিল চাশতের সময়।
৩৫১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের হুকুম জিজ্ঞাসা করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’টি করে কাপড় আছে?
৩৫২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ এক কাপড়ে পরে এমনভাবে যেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে যে, তার উভয় কাঁধে এর কোন অংশ নেই।
৩৫৩। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, সে যেন কাপড়ের দু’প্রান্ত বিপরীত পার্শ্বে রাখে।
৩৫৪। ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) সা’ঈদ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) –কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে কোন সফরে বের হয়েছিলাম। এক রাতে আমি কোন প্রয়োজনে তাঁর কাছে গেলাম। দেখলাম, তিনি সালাত (নামায/নামাজ) রত আছেন। তখন আমার শরীরে মাত্র একখানা কাপড় ছিল। আমি কাপড় দিয়ে শরীর জড়িয়ে নিলাম আর তাঁর পার্শ্বে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে জিজ্ঞাসা করলেনঃ জাবির! রাতের বেলা আসার কারণ কি? তখন আমি তাঁকে আমার প্রয়োজনের কথা জানালাম। আমার কাজ শেষ হলে তিনি বললেনঃ এ কিরুপ জড়ান অবস্থায় তোমকে দেখলাম? আমি বললামঃ কাপড় একটই ছিল (তাই এভাবে করেছি)। তিনি বললেনঃ কাপড় যদি বড় হয়, তাহলে শরীরে জড়িয়ে পরবে। আর যদি ছোট হয়, তাহলে তহবন্দরুপে ব্যাবহার করবে।
৩৫৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা বাচ্চাঁদের মত নিজেদের তহবন্দ কাঁধে বেঁধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর মহিলাদের প্রতি নির্দেশ ছিল যে, তাঁরা যেন পুরুষদের ঠিকমত বসে যাওয়ার পূর্বে সিজদা থেকে মাথা না উঠায়।
৩৫৬। ইয়াহইয়া (রহঃ) মুগীর ইবনু শু’বা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি কোন এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে মুগীরা! লোটাটি লও। আমি তা নিলাম। তিনি আমার দৃষ্টির বাইরে গিয়ে প্রয়োজন সমাধা করলেন। তখন তাঁর দেহে ছিল শামী জুব্বা। তিনি জুব্বার আস্তিন থেকে হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ হওয়ায় তিনি নিচের দিক দিয়ে হাত বের করলেন। আমি পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আর তাঁর উভয় মোজার উপর মাসেহ করলেন ও পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৩৫৭। মাতার ইবনু ফযল (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নবুওয়াতের পূর্বে) কুরাইশদের সাথে কাবার (মেরামতের) জন্য পাথর তুলে দিচ্ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল লুঙ্গী। তাঁর চাচা ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন; ভাতিজা! তুমি লুঙ্গী খুলে কাঁধে পাথরের নীচে রাখলে ভাল হত। জাবির (রাঃ) বলেনঃ তিনি লুঙ্গী খুলে কাঁধে রাখলেন এবং তৎক্ষণাত বেহুশ হয়ে পড়লেন। এরপর তাঁকে আর কখনও বিবস্ত্র অবস্থাই দেখা যায়নি।
৩৫৮। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে দাড়িয়ে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের হুকুম জিজ্ঞাসা করল। তিনি বল্ললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের কাছে কি দু’খানা করে কাপড় আছে? এরপর এক ব্যাক্তি ‘উমর (রাঃ) –কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ যখন তোমাদের সামর্থ্য তখন তোমরাও নিজেদের সামর্থ্য প্রকাশ কর। লোকেরা যেন পুরো পোশাক একত্রে পরিধান করে অর্থাৎ মানুষ তহবন্দ ও চাঁদর, তহবন্দ ও জামা, তহবন্দ ও কাবা, পায়জামা ও চাঁদর, পায়জামা ও জামা, পায়জামা ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও জামা পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, আমার মনে হয় ‘উমর (রাঃ) জাঙ্গিয়া ও চাঁদরের কথাও বলেছিলেন। *কাবাঃ সাধারনত জামার উপরিভাগে যে ঢিলাঢালা জোব্বা আচকান পরা হয়।
৩৫৯। আসিম ইবনু ‘আলী (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে জিজ্ঞাসা করলো, ইহরামকারী কি পরিধান করবে? তিনি বললেনঃ সে জামা পরবে না, পায়জামা পরবে না, টুপি পরবে না, যাফরান বা ওয়ারস রঙে রঞ্জিত কাপড় পরবে না। আর জুতা না পেলে মোজা পরবে। তবে তা পায়ের গিরার নীচে পর্যন্ত কেটে নেবে। নাফি’ (রহঃ)। ইবনু ‘উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। *ওয়ারসঃ এক প্রকার হলুদ রঙের তৃণ জাতীয় সুগন্ধি।
৩৬০। কুতায়বা (রহঃ) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশতিমালে সাম্মা (১) এবং কাপড়ে ইহতিবা (২) করতে নিষেধ করেছেন যাতে তাঁর লজ্জাস্থানে কাপড়ের কোন অংশ না থাকে। ১ সাম্মাঃ একই কাপড়ে সমস্ত শরীর এমনভাবে জড়ানো যাতে হাত-পা নাড়াচাড়া করতে অসুবিধা হয়। ২ ইহতিবাঃ পা ও হাঁটু দাড় করিয়ে বাহু বা কাপড় দিয়ে তা এমন ভাবে বেষ্টন করে নিতম্বের উপর বসা যাতে লজ্জাস্থান খুলে যাওয়ার আশংকা থাকে।
৩৬১। কাবীসা ইবনু ‘উকবা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ধরনের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। তা হল লিমাস ও নিবায* আর ইশ্তিমালে সাম্মা এবং এক কাপড়ে ইহতিবা করতে নিষেধ করেছেন। *জাহিলী যুগের ক্রয়-বিক্রয়ের দু’টি পদ্ধতি। লিমাস বলতে ক্রেতা কতৃক কোন বস্তুকে স্পর্শ করামত্র অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্রয় করতে বাধ্য হওয়া বুঝায়। আর নিবায বলতে ক্রেতা বা বিক্রেতা কতৃক কোন বস্তুর উপর পাথর ছুড়ে মারামাত্র অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্রয় করতে বাধ্য হওয়া বুঝায় (বুখারী ১ম খণ্ড, হাশিয়া নং৪ পৃ ৫৬)। বিস্তারিত জানার জন্য ক্রয়-বিক্রয় (بيع)অধ্যায় দেখুন।
৩৬২। ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাকে আবূ বকর (রাঃ) [যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে তাঁকে হাজ্জের (হজ্জ) আমীর বানানো হয়েছিল] কুরবানীর দিন ঘোষককদের সাথে মিনায় এ ঘোষণা করার জন্য পাঠালেন যে, এ বছরের পরে কোন মুশরিক বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে না। আর কোন উলঙ্গ লোকও বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারবে না। হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) –কে আবূ বকর (রাঃ) –এর পেছনে প্রেরণ করেন আর তাঁকে সুরা বারাআতের (প্রথম অংশের) ঘোষণা করার নির্দেশ দেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ তখন আমাদের সঙ্গে ‘আলী (রাঃ) কুরবানীর দিন মিনায় ঘোষণা দেন যে, এ বছরের পর থেকে আর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে না এবং কোন উলঙ্গ ব্যাক্তিও তাওয়াফ করতে পারবে না।
৩৬৩। আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-এর কাছে গিয়ে দেখি তিনি একটি মাত্র কাপড় নিজের শরীরে জড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন অথচ তাঁর একটা চাঁদর সেখানে রাখা ছিল। সালতের পর আমার বললামঃ হে আবূ আবদুল্লাহ। আপনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন, অথচ আপনার চাঁদর তুলে রেখেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, তোমাদের মত নির্বোধদের দেখানোর জন্য আমি এরুপ করেছি। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে এভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।
৩৬৪। ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়রব যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। সেখানে আমরা ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) খুব ভোরে আদায় করলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হলেন। আবূ তালহা (রাঃ)-ও সওয়ার হলেন, আর আমি আবূ তালহার পেছনে বসা ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সওয়ারীকে খায়বরের পথে চালিত করলেন। আমার হাঁটু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঊরুতে লাগছিল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর ঊরু থেকে ইযার সরে গেল। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর ঊরু উজ্জলতা এখনও আমি দেখছি। তিনি যখন নগরে প্রবেশ করলেন তখন বললেনঃ আল্লাহ আকবার। খায়বর ধ্বংস হউক। আমরা যখন কোন কওমের প্রাঙ্গনে অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের ভোর হবে কতই না মন্দ! এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারন করলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ খায়বরের অধিবাসীরা নিজেদের কাজে বেরিয়েছিল। তারা বলে উঠলঃ মুহাম্মদ! ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কোন কোন সাথী “পূর্ণ বাহিনীসহ” (ওয়াল খামীস) শব্দও যোগ করেছেন। পরে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা খায়বর জয় করলাম। তখন যুদ্ধবন্দীদের সমবেত করা হল। দিহরা (রাঃ) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! বন্দীদের থেকে আমাকে একটি দাসী দিন। তিনি বললেনঃ যাও তুমি একটি দাসী নিয়ে যাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ)-কে নিলেন। তখন এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললঃ ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য়াল্লাহ! বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীরের অন্যতম নেত্রী সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে আপনি দিহয়াকে দিচ্ছেন? তিনি তো একমাত্র আপনার এ যোগ্য। তিনি বললেনঃ দিহয়াকে সাফিয়্যাসহ ডেকে আন। তিনি সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ)-কে দেখলেন তখন (দিহয়াকে) বললেনঃ তুমি বন্দীদের থেকে অন্য একটি দাসী দেখে নাও। রাবী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ)-কে আযাদ করে দিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করলেন। রাবী সাবিত (রহঃ) আবূ হামযা (আনাস) (রাঃ)-কে জিজ্ঞেসা করলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কি মাহর দিলেন? আনাস (রাঃ) জওয়াব দিলেন তাঁকে আযাদ করায় তাঁর মাহর। এর বিনিময়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করেছেন। এরপর পথে উম্মে সুলায়ম (রাঃ) সাফিয়্যা (রাঃ)-কে সাজিয়ে রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর খিদমতে পেশ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাসর রাত যাপন করে ভোরে উঠলেন। তিনি ঘোষণা দিলেনঃ যার কাছে খানার কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। এ বলে তিনি একটা চামড়ার দস্তরখান বিছালেন। কেউ খেজুর নিয়ে আসলো, কেউ ঘি আনলো। ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় আনাস (রাঃ) ছাতুর কথাও উল্লেখ করেছেন। তারপর তাঁরা এসব মিশিয়ে খাবার তৈরি করলেন। এ-ই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ালীমা।
৩৬৫। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর তাঁর সঙ্গে অনেক মু’মিন মহিলা চাঁদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হতো। তারপর তাঁরা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতো। আর তাঁদের কেউ চিনতে পারত না।
৩৬৬। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা একটি কারুকার্য খচিত চাঁদর গায়ে দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর সালাত (নামায/নামাজ) সে চাঁদরের কারুকার্যের প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়ল। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে তিনি বললেনঃ এ চাঁদরখানা আবূ জাহমের কাছে নিয়ে যাও, আর তাঁর কাছ থেকে আমবিজানিয়্যা (কারুকার্য ছাড়া মোটা চাঁদর) নিয়ে আস। এটা তো আমাকে সালাত (নামায/নামাজ) থেকে অমনোযোগী করে দিচ্ছিল। হিশাম ইবনু ‘উরওয়া (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের সময় এর কারুকার্যের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে। তখন আমি আশংকা করছিলাম যে, এটা আমাকে ফিতনায় ফেলে দিতে পারে।
৩৬৭। আবূ মা’মার ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার একটা কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের একদিকে পর্দা হিসাবে ব্যাবহার করছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার সম্মুখ থেকে এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সময় এর ছবিগুল আমার সামনে ভেসে ওঠে।
৩৬৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উকবা ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে একটা রেশমি জুব্বা হাদিয়া হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কিন্তু সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত তা খুলে ফেললেন, যেন তিনি তা পরা অপছন্দ করছিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ মুত্তাকীদের জন্য এই পোশাক সমীচীন নয়।
৩৬৯। মুহাম্মদ ইবনু ‘আর’আর (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে চামড়ার একটা লাল তাঁবুতে দেখলাম এবং তাঁর জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি নিয়ে বিলাল (রাঃ) –কে উপস্থিত দেখলাম। আর লোকেরা তাঁর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানির জন্য প্রতিযোগিতা করছে। কেউ সামান্য পানি পাওয়া মাত্র তা দিয়ে শরীর মুছে নিচ্ছে। আর যে পায়নি সে তাঁর সাথীর ভেজা হাত থেকে নিয়ে নিচ্ছে। তারপর বিলাল (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর একটি লৌহফলকযুক্ত ছড়ি নিয়ে এসে তা মাটিতে পুতে দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা লাল ডোরাযুক্ত পোশাক পরে বের হলেন, তাঁর তহবন্দ কিঞ্চিত উঁচু করে পরা ছিল। সে চরিটি সামনে রেখে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর মানুষ ও জন্তু -জানোয়ার ঐ ছড়িটির বাইরে চলাফেরা করছিল।
৩৭০। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলঃ (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর)মিম্বর কিসের তৈরি ছিল? তিনি বললেনঃ এ বিষয়ে আমার চাইতে জ্ঞাত আর কেউ নেই। তা ছিল গাবা নামক স্থানের ঝাউগাছের কাঠ দিয়ে তৈরী। অমুক মহিলার আযাদকৃত দাস অমুক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর জন্য তা তৈরী করেছিলেন। তা পুরোপুরি তৈরী ও স্থাপিত হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উপর দাড়িয়ে কিবলার দিকে মুখ করে তাকবীর বললেন। লোকেরা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর তিনি কিরাআর পড়লেন ও রুকূতে গেলেন। সকলেই তাঁর পেছনে রুকূতে গেলেন। তারপর তিনি মাথা তুলে পেছনে সরে গিয়ে মাটিতে সিজদা করলেন। এ হল মিম্বরের ইতিহাস। আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন যে, আমাকে আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ আমার ধারনা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচাইতে উঁচু স্থানে ছিলেন। সুতরাং ইমামের মুক্তাদীরের চাইতে উঁচু স্থানে দাঁড়ানোতে কোন দোষ নেই। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ আমি আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-কে বললামঃ সুফিয়ান ইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ)-কে এ বিষয়ে বহুবার প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি তাঁর কাছে এ বিষয়ে কিছু শোনেন নি? তিনি জবাব দিলেনঃ না।
৩৭১। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ঘোড়া থেকে পরে গেলেন, এতে তাঁর পায়ের ‘গোছায়’ অথবা (রাবী বলেছেন) ‘কাঁধে’ আঘাত পান। তিনি তাঁর স্ত্রীদের থেকে এক মাসের জন্য পৃথক হয়ে থাকেন। তখন তিনি ঘরের উপরের কক্ষে অবস্থান করেন যার সিড়ি ছিল খেজুর গাছের কান্ডের তৈরী। সাহাবীগণ তাঁকে দেখতে এলেন, তিনি তাঁদের নিয়ে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, আর তাঁর ছিল দাঁড়ানো। সালাম ফিরিয়ে তিনি বললেনঃ ইমাম এজন্য যে মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করবে। সুতরাং ইমাম তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে, তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি সিজদা দিলে তোমরাও করবে। ইমাম দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। তারপর ঊনত্রিশ দিন পূর্ণ হলে তিনি নেমে আসলেন। তখন লোকেরা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আপনি তো এক মাসের শপথ করেছিলেন। তিনি বললেনঃ এ মাস ঊনত্রিশ দিনের।
৩৭২। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন হায়েয অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও আমি তাঁর বরাবর বসে থাকতাম। কখনো কখনো তিনি সিজদা করার সময় তাঁর কাপড় আমার গায়ে লাগতো। আর তিনি ছোট চাটায়ের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
৩৭৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁর দাদী মুলায়কাহ (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন, যা তাঁর জন্যই তৈরী করেছিলেন। তিনি তা থেকে খেলেন, এরপর বললেনঃ উঠ, তোমাদের নিয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি আমাদের একটি চাটাই আনার জন্য উঠলাম, তা অধিক ব্যাবহার এ কাল হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি সেটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়ালেন। আমি ও একজন ইয়াতীম বালক (যুমায়রা) তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম আর বৃদ্ধা দাদী আমার পেছনে ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি চলে গেলেন।
৩৭৪। আবূল ওলীদ (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট চাটায়ের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
৩৭৫। ইসমা’ঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু’খানা তাঁর কিবলার দিকে ছিল। তিনি সিজদায় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা দু’খানা সঙ্কুচিত করতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু’খানা সপ্রসারিত করতাম। তিনি বলেনঃ সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না।
৩৭৬। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) ‘উরওয়া (রাঃ)-কে বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর তিনি [আয়িশা (রাঃ)] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কিবলার মধ্যে পারিবারিক বিছানায় জানাযার মত আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতেন।
৩৭৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর ;আয়িশা (রাঃ) তাঁর ও তাঁর কিবলার মাঝাখানে তাঁদের বিছানায় শুয়ে থাকতেন।
৩৭৮। আবূল অলীদ হিশাম ইবনু ‘আবদুল মালিক (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। আমাদের কেউ কেউ সিজদার সময় অধিক গরমের কারণে কাপড়ের প্রান্ত সিজদার স্থানে রাখতো।
৩৭৯। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আবূ মাসলামা সা'ঈদ ইবনু ইয়াজীদ আল-আযদী (রহঃ) বলেনঃ আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কি তাঁর না'ইলন (চপ্পল) পরে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
৩৮০। আদম (রহঃ) হাম্মাম ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-কে দেখলাম যে, তিনি পেশাব করলেন। তারপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন আর উভয় মোজার উপরে মাসেহ করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কেউ এরুপ করতে দেখেছি। ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীস মুহাদ্দিসীনের কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। কারণ জারীর (রাঃ) ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর শেষ যুগের ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন।
৩৮১। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) মুগীর ইবনু শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করিয়েছি। তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু)র সময় মোজা দু’টির উপর মাসেহ করলেন ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৩৮২। সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি তাঁর রুকু-সিজদা পুরোপুরি আদায় করছিল না। সে যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলো তখন তাকে হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ তোমার সালাত (নামায/নামাজ) ঠিক হয়নি। রাবী বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি (হুযায়ফা) এ কথাও বলেছেন, (এ অবস্থায়) তোমার মৃত্যু হলে তা মুহাম্মদ এর তরীকা অনুযায়ী হবে না।
৩৮৩। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উভয় বাহু পৃথক রাখতেন। এমনকি তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রকাশ পেতো। লাইস (রহঃ) বলেনঃ জা’ফর ইবনু রবী’আহ (রহঃ) আমার কাছে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৩৮৪। আমর ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী আর আমাদের যবেহ করা প্রানী খায়, সে-ই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে খিয়ানত করো না।
৩৮৫। নু’আইম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে লোকের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা ‘’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’’ স্বীকার করবে। যখন তারা তা স্বীকার করে নেয়, আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, , আমাদের কিবলামুখী আর আমাদের যবেহ করা প্রানী খায়, তখন তাদের জানো-মালসমূহ আমাদের জন্য হারাম হয়ে যায়। অবশ্য রক্তের বা সম্পদের দাবীর কথা ভিন্ন। আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মায়মূন ইবনু সিয়াহ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আবূ হামযাহ, কিসে কিসে মানুষের জানো-মাল হারাম হয়? তিনি জবাব দিলেন, যে ব্যাক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু-এর সাক্ষ্য দেয়, আমাদের কেবলামূখী হয়, , আমাদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের যবেহ করা প্রানী খায়, সে-ই মুসলিম। অন্য মুসলমানদের মতই তার অধিকার রয়েছে। আর অন্য মুসলমানদের মতই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ইবনু আবূ মাররাম, ইয়াহইয়া ইবনু আয়ূব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (অনুরুপ) বর্ণনা করেন।
৩৮৬। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ আয়্যূব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা পায়খানা করতে যাও, তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না কিংবা পিঠ ও দিবে না, বরং তোমরা পূর্বদিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে। আবূ আয়্যূব আনসারী (রাঃ) বলেনঃ আমরা যখন সিরিয়ায় এলাম তখন পায়খানাগুলো কিবলামুখী বানানো পেলাম। আমরা কিছুটা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহ তা’লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতাম। যুহরী (রহঃ) ‘আতা (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আমি আবূ আয়্যূব (রাঃ)-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে অনুরুপ বর্ণনা করতে শুনেছি।
৩৮৭। হুমায়দী (রহঃ) ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) বলেনঃ আমরা ইবনু ‘উমর (রাঃ) কে এক ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম—যে ব্যাক্তি উমরার জন্য বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন কিন্তু সাফা-মারওয়া সা’ঈ করে নি, সে কি তাঁর স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হতে পারবে? তিনি জবাব দিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে সাতবার বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন, মাকামে ইবরাহীমের কাছে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন আর সাফা-মারওয়া সা’ঈ করেছেন। তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেছেনঃ সাফা-মারুওয়া সা’ঈ করার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর কাছে যাবে না।
৩৮৮। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি ‘উমর (রাঃ)-এর নিকট এলেন, এবং বললেনঃ ইনি হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , তিনি কাবা ঘরে প্রবেশ করেছেন। ইবনু ‘উমর বলেন; আমি সেদিকে এগিয়ে গেলাম এবং দেখলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা থেকে বেরিয়ে পরেছেন। আমি বিলাল (রাঃ)কে উভয় কপাটের মাঝখানে দাঁড়ানো দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কা’বা ঘরের অভ্যন্তরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন? তিনি জবাব দিলেন, হাঁ, কা’বায় প্রবেশ করার সময় তোমার বা দিকের দুই স্তম্ভের মধ্যখানে দুই রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তাঁর পর তিনি বের হলেন এবং কাবার সামনে দুই রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে
৩৮৯। ইসহাক ইবনু নসর (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বায় প্রবেশ করেন, তখন তাঁর সকল দিকে দুয়া করেছেন, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করেই বেরিয়ে এসেছেন এবং বের হওয়ার পর কাবার সামনে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন, আর বলেছেন, এই কিবলা।
৩৯০। আবদুল্লাহ ইবনু রাজা’ (রহঃ) বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে ষোল বা সতের মাস সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার দিকে কিবলা করা পছন্দ করতেন। মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ “আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করেছি। (২:১৪৪) তারপর তিনি কাবার দিকে মুখ করেন। আর নির্বোধ লোকেরা –তারা ইয়াহুদী, বলতো, "তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিলো, তা থেকে কিসে তাঁদের কে ফিরিয়ে দিল"? বলুনঃ (হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করেন। (২:১৪২) তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং বেরিয়ে গেলেন। তিনি আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় আনসারগনের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ (তিনি নিজেই) সাক্ষী যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন, আর তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )কাবার দিকে মুখ করেছেন। তখন সে গোত্রের লোকজন ঘুরে কাবার দিকে মুখ করলেন।
৩৯১। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সাওয়ারীর উপর (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন—সওয়ারী তাঁকে নিয়ে যে দিকেই মুখ করত না কেন। কিন্তু যখন ফরয সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা করতেন, তখন নেমে পড়তেন এবং কিবলার দিকে মুখ করতেন।
৩৯২। উসমান (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রাবী ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ আমার জানানেই, তিনি বেশী করেছেন বা কম করেছেন। সালাত (নামায/নামাজ) ফিরানোর পর তাঁকে বলা হল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেনঃ তা কী? তাঁরা বললেনঃ আপনি তো এরুপ এরূপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুয়িয়ে কিবলামুখী হলেন। আর দু’টি সিজদা আদায় করলেন। এরপর সালাম ফিরালেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যায়। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহে হওয়ার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ণ করে। তারপর সে সালাম ফিরিয়ে সিজদা আদায় করে।
৩৯৩। আমার ইবনু ‘আওন (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ) বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে আমার অভিমত আল্লাহর অহির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমরা যদি মাকামে ইবরাহীম কে সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান বানাতে পারতাম! তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান বানাও” (২:১২৫) (দ্বিতীয়) পর্দার আয়াত, আমি বললামঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি যদি আপনার সহদধর্মিনীগনকে পর্দার আদেশ করতেন! কেননা, সৎ ও অসৎ সবাই তাদের সাথে কথা বলে। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হয়। আর একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণ অভিমান সহকারে তাঁর নিকট উপস্থিত হন। তখন আমি তাদেরকে বললামঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তোমাদের তালাক দেয়, তাহলে তাঁর রব তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। (৬৬:৫) তখন এ আয়াত নাযিল হয়।
৩৯৪। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক সময় লোকেরা কুবা নামক স্থানে ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। এমন সময় তাঁদের নিকট এক ব্যাক্তি এসে বললেন যে, এ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অহি নাযিল হয়েছে। আর তাঁকে কাবামুখী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই তোমরা কাবার দিকে মুখ কর। তখন তাঁদের চেহারা ছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে। একথা শুনে তাঁরা কাবার দিকে মুখ করে নিলেন।
৩৯৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরেরে সালাত (নামায/নামাজ) পাঁচ রাক’আত আদায় করেন। তখন মুসল্লীগন জিজ্ঞাসা করলেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) কি কিছু বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ তা কি? তাঁরা বললেনঃ আপনি যে পাঁচ রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। রাবী বলেন, তিনি নিজের পা ঘুরিয়ে (কিবলামুখী হয়ে) দুই সিজদা (সিজদা সাহু) করে নিলেন।
৩৯৬। কুতায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তাঁর কাছে কষ্টদায়ক মনে হল। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে দিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ায় তখন সে তাঁর রবের সাথে একান্তে কথা বলে। অথবা বলেছেন, তাঁর ও কিবলার মাঝখানে তাঁর রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যখন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তাঁর বাম দিকে বা পায়ের নীচে তা ফেলে। তারপর চাঁদরের আঁচল দিয়ে তিনি তাতে থুথু ফেললেন এবং তাঁর এক অংশের উপর ভাঁজ করলেন এবং বললেনঃ অথবা সে এরুপ থাকবে।
৩৯৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে দেওয়ালে থুথু দেখে তা পরিষ্কার করে দিলেন। তারপর লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সে যেন তাঁর সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কেননা, সে যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন তাঁর সামনের দিকে আল্লাহ তা’আলা থাকেন।
৩৯৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকের দেয়ালের শ্লেষ্মা, থুথু কিংবা কফ দেখলেন এবং তা পরিষ্কার করলেন।
৩৯৯। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা ও আবূ সা’ইদ (খুদরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের দেওয়ালে কফ দেখে কাঁকর দিয়ে তা মুছে ফেললেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে কফ না ফেলে, বরং সে যেন তাঁর বাম দিকে অথবা তাঁর পায়ের নীচে ফেলে।
৪০০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও আবূ সা’ঈদ (খুদরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের দেয়ালে কফ দেখলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু কাঁকর নিলেন এবং তা মুছে ফেললেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ কফ ফেললে তা যেন সামনে অথবা ডানে না ফেলে বরং (প্রয়োজনে) সে বাঁ দিকে অথবা বাঁ পায়ের নিচে ফেলবে।
৪০১। হাফসা ইবনু উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের কেউ যেন তার সামনে বা ডানে থুথু না ফেলে; বরং তার বাঁয়ে বা পায়ের নীচে ফেলে।
৪০২। আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "মু'মিন যখন সালাত (নামায/নামাজ) থাকে, তখন সে তার রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে। " বরং তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলে।
৪০৩। আলী (রহঃ) আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদের কিবলার দিকের দেয়ালে কফ দেখলেন, তখন তিনি কাঁকর দিয়ে তা মুছে দিলেন। তারপর সামনের দিকে অথবা ডান দিকে থুথু ফেলতে নিষেধ করলেন। কিন্তু (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলতে বললেন। যুহরী (রহঃ) হুমাইদ (রহঃ) এর মাধ্যমে আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
৪০৪। আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহ, আর তার কাফফারা (প্রতিকার) হল তা পুঁতে ফেলা।
৪০৫। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। সে সে যতক্ষণ তার মূসা ল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। কেননা তার ডান দিকে থাকেন ফিরিশতা। সে যেন তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা পুঁতে ফেলে।
৪০৬। মালিক ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে (দেয়ালে) কফ দেখে তা নিজ হাতে মুছে ফেললেন আর তাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল। বা সে কারণে তাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল এবং এর প্রতি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ পেল। তিনি বললেন “যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ায়, তখন তার রবের সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। অথবা (বলেছেন) তখন তার রব কিবলা ও তার মাঝখানে থাকেন। কাজেই সে সে যেন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে, বরং (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে বা পায়ের নীচে ফেলবে। ” তারপর তিনি চাঁদরের কোণ ধরে তাতে থুথু ফেলে এক অংশের উপর অপর অংশ ভাঁজ করে দিলেন এবং বললেন “অথবা এরূপ করবে। ”
৪০৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কি মনে কর যে, আল্লাহর দৃষ্টি কেবল কিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার কাছে তোমাদের খুশূ (বিনয়) ও রুকু কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন থেকেও তোমাদের দেখি। ”
৪০৮। ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি মিম্বরে উঠলেন এবং ইরশাদ করলেন, “তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) রুকুতে আমি অবশ্যই তোমাদের আমার পেছন থেকে দেখি, যেমন এখন তোমাদের দেখছি”।
৪০৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের জন্য তৈরী ঘোড়াকে ‘হাফয়া’ (নামক স্থান) থেকে ‘সানিয়াতুল ওয়াদা’ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর যে ঘোড়া যুদ্ধের জন্য তৈরী নয়, সে ঘোড়াকে ‘সানিয়া’ থেকে যুরাইক গোত্রের মসজিদ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর এই প্রতিযোগিতায় আবদুল্লাহ ইবনু উমর অগ্রগামী ছিলেন।ইব্রাহীম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বাহরাইন থেকে কিছু মাল এলো। তিনি বললেনঃ এগুলো মসজিদে রেখে দাও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ যাবত যত মাল আনা হয়েছে তার মধ্যে এ মালই ছিল পরিমাণে সবচে বেশী। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) চলে গেলেন এবং এর দিকে ভ্রুক্ষেপও করলেন না। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি এসে মালের কাছে গিয়ে বসলেন। তিনি যাকেই দেখলেন, কিছু মাল তাকে দিয়ে দিলেন। ইতিমধ্যে আব্বাস (রাঃ) এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকেও কিছু দিন। কারণ আমি নিজে ও আকিলের (এ দু’জন বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের কয়েদি ছিলেন) পক্ষ থেকে মুক্তিপণ দিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ নিয়ে যান তিনি তা কাপড়ে ভরে নিলেন। তারপর তা উঠাতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কাউকে বলুন, যেন আমাকে এটি উঠিয়ে দেয়। তিনি বললেনঃ না। আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ তাহলে আপনি নিজেই তুলে দিন তিনি বললেনঃ না। তারপর আব্বাস (রাঃ) তা থেকে কিছু মাল রেখে দিলেন। তারপর আবার তা তুলতে চেষ্টা করলেন। (এবারও তুলতে না পেরে) তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কাউকে আদেশ করুন যেন আমাকে তুলে দেয়। তিনি বললেনঃ না। তাহলে আপনই আমাকে তুলে দিন। তিনি বললেনঃ না। তারপর আব্বাস (রাঃ) আরো কিছু মাল নামিয়ে রাখলেন। এবার তিনি উঠাতে পারলেন এবং তা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার লোভ দেখে এতই অবাক হয়েছিলেন যে, তিনি চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত আব্বাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দিরহাম বাকী থাকা পর্যন্ত উঠলেন না।
৪১০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মসজিদে পেলাম আর তার সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন সাহাবী। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তোমাকে কি আবূ তালহা পাঠিয়েছেন? আমি বললাম জী হাঁ। তিনি বললেনঃ খাবারের জন্য? আমি বললাম: জী হাঁ তখন তার আশেপাশে যারা ছিলেন, তাঁদেরকে বললেনঃ উঠ। তারপর তিনি চলতে শুরু করলেন। (রাবী বলেন) আমি তাঁদের সামনে সামনে চললাম।
৪১১। ইয়াহইয়া (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি বলল: ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কেউ তার স্ত্রীর সাথে অন্য ব্যাক্তিকে দেখতে পেলে কি সে তাকে হত্যা করবে? পরে মসজিদে সে ও তার স্ত্রী একে অন্যকে লি’য়ান করল। তখন আমি উপস্থিত ছিলাম।
৪১২। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে এলেন এবং বললেনঃ তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন: তখন আমি তাঁকে একটি স্থানের দিকে ইশারা করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বললেন। আমরা তাঁর পেছনে কাতার করে দাঁড়ালাম তিনি দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৪১৩। সা’ঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) মাহমুদ ইবনু রাবী আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ), যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাযির হয়ে আরজ করলেন: ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা আর পার হয়ে তাদের মসজিদে পৌঁছতে এবং তাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে তাশরিফ নিয়ে কোন এক স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য নির্দিষ্ট করে নই। রাবি বলেন: তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনশা আল্লাহ অচিরেই আমি তা করব। ইতবান (রাঃ) বলেন: পরদিন সূর্যোদয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) আমার ঘরে তাশরিফ আনেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন: আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইংগিত করলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। তিনি (ইতবান) বলেন: আমরা তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বসালাম এবং তাঁর তৈরী ‘খাযীরাহ’ নামক খাবার তাঁর সামনে পেশ করলাম। রাবী বলেন: এ সময় মহল্লার কিছু লোক ঘরে ভীড় জমালেন। তখন তিনি উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তিকে বলে উঠলেন, ‘মালিক ইবনু দু’খাইশিন’ কোথায়? অথবা বললেন ‘ইবনু দুখশুন’ কোথায়? তখন একজন জওয়াব দিলেন, সে মুনাফিক। সে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল কে ভালবাসে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ বলো না। তুমি কি দেখছ না যে, সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে? তখন সে ব্যাক্তি বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল) ই ভাল জানেন। আমরা তো তাঁর সম্পর্ক ও হিত কামনা মুনাফিকদের সাথেই দেখি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’য়াল তো এমন ব্যাক্তির প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তোষটি লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। রাবী ইবনু শিহাব বলেন: তারপর আমি মাহমুদ ইবনু রাবী (রাঃ) এর হদীস সম্পর্কে হোসাইন ইবনু মুহম্মদ আনসারী (রহঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম, যিনি বানূ সালিম গোত্রের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি এ হদীস সমর্থন করলেন।
৪১৪। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সমস্ত কাজে যথাসম্ভব ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। পবিত্রতা হাসিলের সময়, মাথা আঁচড়ানোর সময় এবং জুতা পরিধানের সময়ও।
৪১৫। মুহম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উম্মে হাবীবা ও উম্মে সালমা (রাঃ) হাবশায় তাঁদের দেখা একটি গির্জার কথা বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি ইরশাদ করলেন: তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মসজিদ বানাতো। আর তার ভিতরে ঐ লোকের মূর্তি তৈরী করে রাখতো। কিয়ামতের দিন তারাই আল্লাহর কাছে সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টি বলে গণ্য হবে।
৪১৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় পৌঁছে প্রথমে মদিনার উচ্চ এলাকায় অবস্থিত বানূ ‘আমর ইবনু আউফ’ নামক গোত্রে উপনীত হন। তাদের সঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দ দিন (অপর বর্ণনায় চব্বিশ দিন) অবস্থান করেন। তারপর তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে পাঠালেন। তারা কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে উপস্থিত হল। আমি যেন এখনো সে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তার বাহনের উপর, আবূ বকর (রাঃ) সে বাহনেই তাঁর পেছনে আর বানূ নাজ্জারের দল তাঁর আশেপাশে। অবশেষে তিনি আবূ আইয়্যুব আনসারী (রাঃ) এর ঘরে সামনে অবতরণ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হয় সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তিনি ছাগল-ভেড়ার খোয়াড়েও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এখন তিনি মসজিদ তৈরী করার নির্দেশ দেন। তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে বললেনঃ হে বানূ নাজ্জার! তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের এই বাগিচার মূল্য নির্ধারণ কর। তারা বললোঃ আল্লাহর কসম, আমরা এর দাম নেব না। এর দাম আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই আশা করি। আনাস (রাঃ) বলেন: আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুরের গাছ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুড়ে ফেলা হল। তারপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে দেয়া হল, খেজুরের গাছ গুলো কেটে ফেলা হল এবং এর দুই পাশে পাথর বসানো হল। সাহাবীগণ পাথর তুলতে তুলতে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও তাঁদের সাথে ছিলেন। তিনি তখন বলছিলেন: “ইয়া আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ছাড়া (প্রকৃতপক্ষে) আর কোন কল্যাণ নেই। আপনি আনসার ও মুহাজিরগণকে ক্ষমা করে দিন।
৪১৭। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগল থাকার স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। রাবী বলেন, তারপর আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, মসজিদ নির্মাণের আগে তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )ছাগল থাকার স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন।
৪১৮। সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে তাঁর উটের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখছি। আর ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন: আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা করতে দেখেছি।
৪১৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার সূর্য গ্রহণ হল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বললেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য আমি আর দেখিনি।
৪২০। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবরে পরিণত করবে না।
৪২১। ইসমা’ঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা এসব আযাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। কান্না না আসিলে সেখানে প্রবেশ করো না, যেন তোমাদের প্রতিও এমন আযাব না আসে যা তাদের উপর আপতিত হয়েছিল।
৪২২। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মে সালমা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে তাঁর হাবশায় দেখা মারিয়া নামক একটা গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। তিনি সেখানে যে সব প্রতিচ্ছবি দেখে ছিলেন, সেগুলোর বর্ণনা দিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এরা এমন সম্প্রদায় যে, এদের মধ্যে কোন সৎ বান্দা অথবা বলেছেন কোন সৎ লোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ বানিয়ে নিত। আর তাতে ঐ সব ব্যাক্তির প্রতিচ্ছবি স্থাপন করতো। এরা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট সৃষ্টি।
৪২৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আয়িশা ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত নিকটবর্তী হলে তিনি তাঁর একটা চাঁদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল, তখন মুখ থেকে চাঁদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। (এ বলে) তারা যে (বিদ’আতী) কার্যকলাপ করত তা থেকে তিনি সতর্ক করলেন।
৪২৪। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা’য়ালা ইয়াহূদীদের ধ্বংস করুন। তারা তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।
৪২৫। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোন নাবী কে দেয়া হয়নি। ১। আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়। ২। সমস্ত জমিন আমার জন্য সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। ৩। আমার জন্য গণীমত হালাল করা হয়েছে। ৪। অন্যান্য নাবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হতেন আর আমাকে সকল মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে। ৫। আমাকে (ব্যাপক) শাফা’য়াতের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
৪২৬। উবাইদ ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কোন আরব গোত্রের একটি কাল দাসী ছিল। তারা তাকে আযাদ করে দিল। সে তাদেরই সাথে থেকে গেল। সে বলেছে যে, তাদের একটি মেয়ে গলায় লাল চামড়ার ওপর মূল্যবান পাথর খচিত হার পরে বাইরে গেল। দাসী বলেছে, সে হারটা হয়তো নিজে কোথাও রেখে দিয়েছিল, অথবা কোথায় পড়ে গিয়েছিল। তখন চিল তা পড়ে থাকা অবস্থায় গোশতের টুকরা মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। দাসী বলেছে: তারপর গোত্রের লোকেরা বেশ খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো। কিন্তু তারা তা পেল না। তখন তারা আমার উপর এর দোষ চাপাল। সে বলেছে: তারা আমার উপর তল্লাশী শুরু করলো, এমন কি আমার লজ্জা-স্থানেও তল্লাশী চালাল। দাসীটি বলেছে: আল্লাহর কসম! আমি তাদের সাথে সে অবস্থায় দাঁড়ানো ছিলাম, এমন সময় চিলটি উড়ে যেতে যেতে হারটি ফেলে দিল। সে বলেছে তাদের সামনেই তা পড়লো। তখন আমি বললাম: তোমরা তো এর জন্যই আমার উপর দোষ চাপিয়ে ছিলে! তোমরা আমার উপর সন্দেহ করেছিলে অথচ আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। এই তো সেই হার! সে বলেছে: তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করলো। আয়িশা (রাঃ) বলেন: তাঁর জন্য মসজিদে (নববীতে) একটা তাঁবু অথবা ছাপড়া করে দেয়া হয়েছিল। আয়িশা (রাঃ) বলেন (দাসীটি) আমার কাছে আসতো আর মার সঙ্গে কথা বার্তা বলতো। সে আমার কাছে যখনই বসত তখনই বলতো: “সেই হারের দিনটি আমার রবের আশ্চর্য ঘটনা বিশেষ। যেনে রাখুন সে ঘটনাটি আমাকে কুফরের শহর থেকে মুক্তি দিয়েছে”। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম: কি ব্যাপার, তুমি আমার কাছে বসলেই যে এ কথাটা বলে থাক? আয়িশা (রাঃ) বলেন: সে তখন আমার কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল।
৪২৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। তাঁর কোন পরিবার-পরিজন ছিল না।
৪২৮। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রাঃ) এর ঘরে এলেন, কিন্তু আলী (রাঃ) কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাঁর মধ্যে কিছু ঘটেছে। তিনি আমার সাথে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেন নি। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যাক্তি খোঁজে এসে বললোঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন, তখন আলী (রাঃ) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশের চাঁদর পড়ে গিয়েছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবূ তুরাব! উঠ, হে আবূ তুরাব!
৪২৯। ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি সত্তরজন আসহাবে সুফফাকে দেখেছি, তাঁদের কারো গায়ে বড় চাঁদর ছিল না। হয়ত ছিল কেবল তহবন্দ কিংবা ছোট চাঁদর, যা তাঁরা ঘাড়ে বেঁধে রাখতেন। (নীচের দিকে) কারো নিসফে সাক বা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত আর কারো টাখনু পর্যন্ত ছিল। তাঁরা লজ্জা-স্থান দেখা যাওয়ার ভয়ে কাপড় হাতে ধরে একত্র করে রাখতেন।
৪৩০। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তিনি তখন মসজিদে ছিলেন। তখন মিস’আর (রহঃ) বলেন: আমার মনে পড়ে রাবী মুহারিব (রহঃ) চাশতের সময়ের কথা বলেছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। জাবির বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। তিনি তা দিয়ে দিলেন এবং কিছু বেশীও দিলেন।
৪৩১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ কাতাদা সালামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়।
৪৩২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কেউ মসজিদে সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর হাদাসের পূর্ব পর্যন্ত যেখানে সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ সেখানে যতক্ষণ বসে থাকে ততক্ষণ ফিরিশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। তাঁরা বলেন: হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন! হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন।
৪৩৩। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এর সময়ে মসজিদ তৈরী হয় কাঁচা ইট দিয়ে, তার ছাদ ছিল খেজুরের ডালের, খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবূ বকর (রাঃ) এতে কিছু বাড়ান নি। অবশ্য উমর (রাঃ) বাড়িয়েছেন। আর তার ভিত্তি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যে ভিত্তি ছিল তার উপর কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল দিয়ে নির্মাণ করেন এবং তিনি খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে কাঠের (খুঁটি) লাগান। তারপর উসমান (রাঃ) তাতে পরিবর্তন সাধন করেন এবং অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনি দেয়াল তৈরী করেন নকশী পাথর ও চুন-সুরকি দিয়ে। খুঁটিও দেন নকশা করা পাথরের, ছাদ বানান সেগুন কাঠ দিয়ে।
৪৩৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইকরিমা (রহঃ) বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে ও তার ছেলে আলী (রাঃ) কে বললেনঃ তোমরা উভয়ই আবূ সা’ঈদ (রাঃ) কাছে যাও এবং তাঁর থেকে হদীস শুনে আস। আমরা গেলাম। তখন তিনি এক বাগানে কাজ করছেন। তিনি আমাদেরকে দেখে চাঁদরে হাঁটু মুড়ি দিয়ে বসলেন এবং পরে হাদিস বর্ণনা শুরু করলেন। শেষ পর্যায়ে তিনি মসজিদে নববী নির্মাণ আলোচনায় আসলেন। তিনি বললেনঃ আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর আম্মার (রাঃ) দুটো দুটো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে তাঁর দেহ থেকে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেনঃ আম্মারের জন্য আফসোস, তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে আহবান করবে জান্নাতের দিকে আর তারা আহবান করবে জাহান্নামের দিকে। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন: তখন আম্মার (রাঃ) বললেনঃ আমি ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।
৪৩৫। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার নিকট লোক পাঠিয়ে বললেনঃ তুমি তোমার গোলাম কাঠমিস্ত্রীকে বল, সে যেন আমার বসার জন্য কাঠের মিম্বর তৈরী করে দেয়।
৪৩৬। খাল্লাদ (রহঃ) ইবনু ইয়াহইয়া জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কি আপনার বসার জন্য কিছু তৈরী করে দিব? আমার এক কাঠমিস্ত্রী গোলাম আছে। তিনি বললেনঃ যদি তোমার ইচ্ছা হয়। তারপর তিনি একটি মিম্বর তৈরী করিয়ে দিলেন।
৪৩৭। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) উবায়দুল্লাহ খাওলানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, তিনি যখন মসজিদে নববী নির্মাণ করেছিলেন তখন লোকজনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছিলেন: তোমরা আমার উপর অনেক বাড়াবাড়ি করছ অথচ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি মসজিদ নির্মাণ করে, বুকায়র (রহঃ) বলেন: আমার মনে হয় রাবী ‘আসিম’ (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তা’য়ালা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী করবেন।
৪৩৮। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক ব্যাক্তি তীর সাথে করে মসজিদে নববী অতিক্রম করছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ এর ফলকগুলো হাতে ধরে রাখ।
৪৩৯। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) আবূ বুরদা (রহঃ) এর পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যাক্তি তীর নিয়ে আমাদের মসজিদ অথবা বাজার দিয়ে চলে সে যেন তার ফলক হাতে ধরে রাখে, যাতে করে তার হাতে কোন মুসলমান আঘাত না পায়।
৪৪০। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হাসসান ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহর কসম দিয়ে এ কথার সাক্ষ্য চেয়ে বলেন: আপনি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছেন, হে হসসান! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে (কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের) জওয়াব দাও। হে আল্লাহ! হাসসানকে রূহুল কুদুস (জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বারা সাহায্য করুন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) জওয়াবে বললেনঃ হাঁ।